রাজবাড়ীর বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় গড়ে উঠেছে গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে পাট ও হোগলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব শতাধিক ধরনের পন্য। ব্যপক চাহিদা থাকায় ইউরোপসহ আটটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এসব পন্য। তৈরি হয়েছে অন্তত এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান।
গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেডের কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, ২০১৪ সালে রাজবাড়ী শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দুরে বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোঃ হাকিম আলী সরদার নীজের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন কিছুর করার চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করেন। নিজের তিন একর জমি, জমানো কিছু টাকা ও ইসলামি ব্যাংকের সহযোতিায় গড়ে তোলেন গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেড। বর্তমানে এখানে নিয়মিত কাজ করছেন ৩ শত শ্রমিক। আর চুক্তি ভিত্তিতে বাহিরে কাজ করছেন আরো ৭ শত শ্রমিক। যারা বেশির ভাগই সর্বনাশা পদ্মায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব।
সরেজমিনে গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেডের গিয়ে দেখাযায়, এখানে পুরুষ শ্রমিকের সাথে তালমিলিয়ে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা।
এ সময় শ্রমিক ইব্রাহিম বলেন, আমি একসময় ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। ঢাকায় কাজ করে আমি যে বেতন পেতাম রাজবাড়ীতেও সেই বেতন পাচ্ছি। সুবিধা হয়েছে ঢাকায় বাসা ভাড়া ও অন্যান্য করে করে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়েছি। আর এখানে নিজের বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারছি। এখন অনেক ভালোভাবে কাটছে দিন।
শ্রমিক মাসুদ রানা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার কারণে আমার মতো অনেক ব্যক্তি অনার্স মাস্টার্স পাস করে এখানে অফিসিয়াল কাজসহ বিভিন্ন কাজ করছে। এতে জেলার বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে।
ইরিনা আক্তার নামে অপর এক শ্রমিক জানান, আগে স্বামী একা কাজ করতো এখন আমি ও কাজ করি। দুইজনে আয় দিয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছে। পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনা করাতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় আসি আর বিকেল ৫ টায় বাড়ি গিয়ে বাড়ির কাজ করি।
সালমা আক্তার নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, সর্বনাশা পদ্মার ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি জমিজমা সব হারিয়েছি। বাড়ির কাছে এই কারখানায় চাকুরী করে এক বছরে ৭০ হাজার টাকা জমিয়েছি। আগামি বছর একটু জমি কিনে ঘর তোলার স্বপ্ন দেখছি। আমার মতো অনেক নারী আছে যারা এখানে কাজ করে নিজের পায়ে দারিয়েছে।
গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাচামাল হচ্ছে পাট ও হোগলা। রাজবাড়ীতে প্রচুর পাট চাষ হয় তাই এই জেলা থেকে পাট ক্রয় করা হয়। আর হোগলা কিনে আনা হয় কুমিল্লা থেকে। এখানে পাট এবং হোগলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে, ম্যাট, পাপস, টুপি, ফুলের টপ, ব্যাগসহ শতাধিক ধরনের পন্য। এসব পন্য রপ্তানি হচ্ছে জাপান, কানাডা, আমেরিকা, চিন, অস্টেলিয়া, সৌদি আরবসহ আটটি দেশে।
এদিকে পরিবেশ বান্ধব এইসব পন্যের ব্যবসা করতে আগ্রহী হচ্ছে রাজবাড়ীতে জন্মগ্রহন করা প্রবাসীরা। প্রতিদিনই কেউ না কেউ কারখানাটি পরিদর্শন করছেন। বিভিন্ন ধরনের পন্যের ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় রাজবাড়ী জেলা শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার বাসিন্দা রফিকুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, আর ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ধরনের পন্যের ব্যবসা করে। এখানে কি কি ? তৈরি হয় তার ছবি তুলে পাঠাতে বলেছে তাই আমি এসেছি। ছবিগুলো পাঠাবো। তাদের পছন্দ হলে অর্ডার দিয়ে নিয়ে ব্যবসা করবে।
গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ হাকিম আলী সরদার বলেন, রাজবাড়ী জেলাটি অনেক অবহেলিত। এই জেলায় তেমন কোন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনি। এই জেলার অনেক মানুষ আছে যারা ঢাকায় বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন। আমার উদ্যোগ ছিলো নীজের জেলার মানুষের জন্য কিছু করার। এ জেলার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে আমি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিছু সমস্যা আছে। যেমন গ্রাম অঞ্চলের রাস্তাঘাট ভালো নয়। আমাদের উৎপাদিত পন্য দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে দেশের বাহিয়ে যায়। অনেক সময় ঘাটেই তিন থেকে চার দিন ট্রাক আটকে থাকে। এছারাও বৈদ্যুতিক সমস্যা রয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিং হয়। এতে কারখানার উৎপাদনে ব্যঘাত ঘটে। আমাদের ব্যাংক সুদের হার অনেক বেশি। সব মিলিয়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো বড় আকারে কারখানাটি করতে চাই সে ক্ষেত্রে আরো বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এ- ক্রাফট লিমিটেডের তৈরি বিভিন্ন পন্যের কথা আমি শুনেছি। কথা বলেছি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্নধারদের সাথে। তাদের বৈদ্যুতিক সমস্যাটা বেশি। আমি তাদের বলেছি একটি আবেদন নিয়ে আসতে। খুব তারাতারি যাতে ওনাদের কারখানায় ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সাথে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়াও পরিবেশ বান্ধব এসব পন্য তৈরির উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।