স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে গিয়ে লক্ষ্মীপুরে কমলনগরে কেরোসিন ঢেলে তরুনী শাহেনুর আক্তারকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। (আজ) সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে রামগতির বুড়াকর্তার আশ্রম এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে ইউপি সদস্য,গ্রাম পুলিশসহ গ্রেফতার হলো ৫ জন। পুলিশ সুপার আ স মাহাতাব উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তরুনী শাহেনুর আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান,লক্ষ্মীপুরে স্ত্রী’র স্বীকৃতি চাইতে এসে গায়ে কেরোসিন দিয়ে শাহিন আক্তারকে হত্যার ঘটনায় মামলার ৭ দিন পর প্রধান আসামি নিহতের স্বামী সালাউদ্দিনকে রামগতির আশ্রয়ম এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে নিহতের পিতা জাফর উদ্দিন ২২ এপ্রিল রাত ৯টা দিকে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানায় এসে নিহত শাহিন আক্তারের স্বামী সালাউদ্দিনকে প্রধান করে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় ইতোপূর্বে আটককৃত সালাউদ্দিনের দুই ভাই মোঃ আলাউদ্দিন ও আবদুর রহমান বিশ্বাস, স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন ও চৌকিদার আবু তাহেরকেও এজাহারে আসামি হিসাবে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ ছাড়া এজাহার নামীয় ৫ জনসহ এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে গ্রেফতাকৃত ৪ জনকে ২ দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়েছে যে, কমলনগর থানাধীন চর ফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বার মাঝির টেক এলাকার জনৈক সালাউদ্দিন চট্টগ্রামের রিক্সা চালানোর সুবাধে গার্মেন্টস কর্মী বাদীর কন্যা শাহিন আক্তারের সাথে পরিচয় এবং দেড় বছর পূর্বে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা চট্টগ্রামের আন্ধারবাগ রহমানিয়া স্কুলের পাশে বসবাস করত। কিন্তু বিগত ৪/৫ মাস থেকে ওই সালাউদ্দিন তার স্ত্রী শাহিন আক্তারের সাথে যোগযোগ বন্ধ করে দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে চলে আসে। পরে শাহিন আক্তার জানতে পারে যে সালাউদ্দিন ইতোপূর্বে আরো একটি বিয়ে করেছে। সে ঘরে তার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাই সে স্ত্রী মর্যাদা পেতে বিগত ১৫/২০ দিন পূর্বে লক্ষ্মীপুরে সালাউদ্দিনের শ্বশুর বাড়ী কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বানুর বাপের বাড়ীতে এসে তার বিয়ের কথা জানায় এবং তাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে সালাউদ্দিনকে চাপ দেয়। কিন্তু সালাউদ্দিন তা অস্বীকার করে তাকে তাড়িয়ে দেয়। গত ২০ এপ্রিল শনিবার শাহিন আক্তার পুনরায় লক্ষ্মীপুর এসে তার স্বামী সালাউদ্দিনের কাছে স্ত্রী’র স্বীকৃতি দাবী করে এবং স্বীকৃতি না দিলে সে ফিরে যাবেনা বলেও জানায়। এতে স্বামী সালাউদ্দিন রাজি না হওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চৌকিদারের সহায়তায় এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠকে শাহিন আক্তার বিয়ের কোন প্রমাণ পত্র দেখাতে না পারায় বর্ণিত আসামিরা তাকে নানা ভাবে তিরস্কার অপমান অপদস্থ করে এবং এলাকা থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু সে যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তীতে বর্ণিত আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে তার মেয়ের গায়ে জোরপূর্বক কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে সে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে মারা যায় সে। এ ঘটনার প্রধান আসামি সালাউদ্দিনকে দ্রুত গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার দাবী করেন নিহত শাহিন আক্তারের বাবা জাফর উদ্দিন।
কমলনগর থানার ওসি মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, সোমবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে স্থী হত্যার মামলার প্রধান আসামি সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে শাহিনুর হত্যার মামলার প্রধান আসামীসহ গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জন। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতদের জিগাসাবাদে বাকী আসামীদের সনাক্তসহ গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
জানাগেছে,২১ এপ্রিল রোববার বিকেলে কমলনগর উপজেলার আইয়ুবনগর এলাকার একটি সয়াবিন ক্ষেত থেকে তরুনী শাহেনুর আক্তারকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওইদিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়। সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তরুনী শাহেনুর আক্তার। পরের দিন মঙ্গলবার রাতে ওই তরুনীর বাবা ফয়েজ আহমদ বাদী হয়ে কমলনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়, তরুনীর স্বামী সালাউদ্দিন এবং তার দুই ভাই আবদুর রহমান ও আলাউদ্দিন। এ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন,গ্রাম পুলিশ আবু তাহেরসহ ৫জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৮জনকে অজ্ঞাত আসামী। অভিযোগ রয়েছে স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে গিয়ে শাহেনুর আক্তারকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করে সালাউদ্দিনসহ অন্য আসামীরা। এর আগে মোবাইল ফোনে সালাউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয় চট্রগ্রামের রাউজানের তরুনী শাহেনুর আক্তার। দেড় বছর সম্পর্কের পর দুইজনে কাজী অফিসে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। গত ৬ মাস আগে তরুণী জানতে পারে সালাউদ্দনি বিবাহিত। এই কথা শোনার পর বেশ কয়েক বার কমলনগরে স্ত্রীর স্বীকৃতির জন্য সালাউদ্দিনের কাছে ছুটে আসে সে। এরপর এ ঘটনা ঘটৈ।