জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের সাজা ও অর্থদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া তাঁকে ওই মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। সম্পত্তি জব্দের আদেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন আদালত।
একই সঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে এ মামলার নথি তলব করা হয়েছে। আগামি দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে মামলার নথি দাখিল করতে হবে। মামলার নথি আসার পর খালেদা জিয়া জামিনের বিষয়টি দেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
আদালত আরও বলেন, যেহেতু জামিন দিলেও অন্য মামলা থাকায় বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন না, সেহেতু এই মুহূর্তে জামিন নয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য হাইকোর্ট গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় আদালতে খালেদার পক্ষে আরও ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল ও এ কে এম এহসানুর রহমান।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করলে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর ওই মামলায় রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক। রায়ে ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামিকেও সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করেছেন, যার গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হলো আজ মঙ্গলবার।
খালেদা জিয়ার ছাড়া অপর তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। তাঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত ওই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন।
এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রায়ে যে ৪২ কাঠা জমির ক্রয় নিয়ে মামলার সূচনা, সেই জমিটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিলেন আদালত। পরে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এ মামলায় সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর করেন। দুর্নীতি মামলায় দ-িত হয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন খালেদা জিয়া।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।