দুই মাস নিষেধাজ্ঞার পর মঙ্গলবার থেকে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে নামছেন জেলেরা। তাই জাল ও নৌকার সব ধরনের কাজ সেরে তারা এখন মেঘনায় জাল ফেলার অপেক্ষায়। জেলেরা জানান, দুই মাস নিষেধাজ্ঞার পর এখন নদীতে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে তারা খুশি। এর আগে নির্বিচারে জাটকা ধরতে উৎসাহিত করার পেছনে শতাধিক আড়তদার ও কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগের দায়িত্বে অবহেলাকেই দায়ী করেছেন তারা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি হিসেবে এই জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছেন। এদের অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিবন্ধিত রয়েছেন ৪২ হাজার জেলে। কিন্তু তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার জেলেকে। ২৭ হাজার জেলের নাম নেই তালিকায়। গত ১ মার্চ-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত। এসময়ে আইন অমান্যকারী ৩৮ জেলেকে জেল ও ৩৩ জেলেকে জরিমানা ও মামলা করা হয়েছে। কারেন্ট জাল পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র মৎস্য জীবি সমিতির নেতাকর্মীদের অভিযোগ,জাটকা শিকার বন্ধে লক্ষ্মীপুর কোস্ট গার্ড ফোর্স ও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ,কোস্টগার্ডে সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা দরকার ছিল। কিছু অভিযান হলেও স্থানীয় দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের চাপ থাকায় জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হয়েছে।
কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নের জেলে হাছান মাঝি জানান, পুনর্বাসনের চাল না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই দুই মাস খুব কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন। খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হলেও জেলেদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের চাল পাচ্ছেন না অনেকে।
রামগতির আলেকজান্ডারের জেলে নিজাম জানান, সরকারি বরাদ্দের চাল না পেলেও তিনি নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনায় মাছ ধরতে যাননি। তবে উচ্ছেদ অভিযানের আগে আড়তসহ বরফকলগুলো বন্ধ করা হলে জেলেরা আর নদীতে নামতেন না। ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, জাটকা শিকার বন্ধে লক্ষ্মীপুর কোস্টগার্ড ফোর্স ও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা দরকার ছিল। কিছু অভিযান হলেও স্থানীয় দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের চাপ থাকায় জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে বাধ্য হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ্ জানান, লোকজন কম থাকার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু জেলে নদীতে মাছ শিকারে নামছিলেন। পরে ওই জেলেরা ধরা পড়েছেন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে আইন অমান্যকারী জেলেদের জেল- জরিমানা ও মামলা করা হয়েছে। দুই মাসে ৩৭৩টি অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে শতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করা। অভিযান সফল হওয়ায় গত বারের চেয়ে এবার মাছের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন মৎস্য বিভাগ। ভবিষৎতে তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি। তবে নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও আগামি ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা যাবে না।
স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল জানান,নিষেধাজ্ঞার সময় ও পরের মে-জুনসহ ৪ মাস প্রতি জেলেকে ৪০ কেজি হারে ভিজিএফের চাউল প্রদান করে সরকার। আগামীতে প্রত্যেক জেলেই জেলে খাদ্য সহায়তা পাবে। এ ছাড়া জেলেদেরও পূর্ণবাসনসহ তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।