খুলনার পাইকগাছায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। একই ভবনেই রয়েছে হাজতখানা ও পুলিশ ব্র্যাক। দীর্ঘ দিন যাবৎ ভবনটির ছাদের বিভিন্নস্থানে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। সামান্য বৃষ্টিতে ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ে এজলাসসহ বিভিন্ন স্থানে। এতে অসংখ্য মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সহ জানমাল অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রীতিমত হুমকির মুখে পড়েছে আদালত পাড়ার স্বাভাবিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আদালতগুলোর মূল ভবনের পলেস্তরা খোঁসে পড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ফাটল ধরেছে বারান্দা, হাজত খানা এবং পুলিশ ব্র্যাকের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে আদালত দু’টিতে মামলার সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিচার প্রার্থীসহ লোক সমাগমও বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে। প্রায় সাড়ে ৩ দশক পূর্বে নির্মিত ভবনের ছোট ছোট এজলাসে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করাও দূরুহ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিনেও পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না হওয়ায় যত্রতত্র ঢুঁকে পড়ছে ভ্যান রিকসা থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল, নসিমন-করিমন ও স্থানীয় আবাসিক এলাকার গবাদি পশু। মলমূত্র ত্যাগ করে আদালত চত্ত্বরের পরিবেশ দূষিত ও অলিখিত পার্কিং জোন তৈরী হওয়ায় আদালতের স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মক ভাবে বিঘিœত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে পাইকগাছায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালে সরকার দেশের উপজেলা পর্যায়ের আদালতগুলো জেলাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলেও জেলা সদর থেকে দূরত্বের বিশেষ বিবেচনায় আদালত দু’টি পাইকগাছাতেই রয়ে যায়। এতে বিশেষভাবে উপকৃত হন তৃণমূলের সাধারণ বিচার প্রার্থীরা। সময়, অর্থ ও হয়রাণীর হাত থেকে পরিত্রাণ পায় উপকূলীয় অবহেলিত জনপদের বঞ্চিত সাধারণ মানুষরা। তবে আদালত প্রতিষ্ঠার পর বার বার সরকারের পট পরিবর্তনের বিভিন্ন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও পরিবর্তন হয়নি আদালত ভবনটি। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পৌরসভা। উন্নয়ন সোপাণে শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে পৌরসভারও। উপকূলীয় জনপদে জীবন মানেরও পরিবর্তন এসেছে। তবে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি আদালত দু’টির। পুরনো সেই ভবনেই চলছে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। দুর্যোগপ্রবন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৩৫ বছরেরও অধিক পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ আদালত ভবনগুলো পূণঃনির্মাণে এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে কাজ করছেন আদালতের বিচারক, আইনজীবী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া আদালতের ১৫ জন কর্মচারী, ৭১ জন আইনজীবী ও ৯০ জন আইনজীবী সহকারী ও তাদের শীক্ষানবীশরা কর্মরত রয়েছেন।
সূত্র জানায়, ভবন সংস্কারের জন্য আদালতের বিচারক ও আইনজীবী সমিতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবনের সংস্কারের আশ্বাস দিলেও আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে বিচারাধীন ও নতুন মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত স্থান না থাকায় দেওয়ানী, ফৌজদারী মামলার বিপুল সংখ্যক নথি স্তুপকারে রাখতে হয় কক্ষের মেঝেতে। এতে ঐ সব নথিপত্র নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রায়ই নথি খুঁজতে বেগ পেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ধ্বসে যেকোনো সময়ে প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে পাইকগাছায় আদালতগুলোর নতুন ভবন নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
পাইকগাছা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. দীপঙ্কর সাহা এফএনএসকে জানান, আদালত ভবনের সর্বশেষ ভগ্নদশা নিয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার বিচারক ও আইনজীবী সমিতি আইন মন্ত্রালয় সহ প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত এনিয়ে কেউ কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি। বিশিষ্ঠ সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও অ্যাড. এফ এম এ রাজ্জাক এফএনএসকে জানান, প্রতিনিয়ত জরাজীর্ণ আদালত ভবনে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে তারা নানা অজানা আশঙ্কায় কাজ করছেন। নিরাপত্তার স্বাথে সুষ্ঠুভাবে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা সহ সার্বিক পরিবেশ বজায় রাখতে আদালত ভবন পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি পূর্ণ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।