ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষ বা ভবনের অভাবে দীর্ঘদিন যাবত প্রায় ৫৭ বছরের পুরাতন ঝুকিপূর্ণ একটি ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ঐতিহ্যবাহী কামারখালী উচ্চবিদ্যালয়ের পুরাতন দ্বিতল বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের ১১টি কক্ষ চলছে অফিস ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। অফিস চলাকালীন সময়ে সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় বিদ্যালয়ের ১৮০ ফুট দৈঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থ এই পুরাতন ১১ কক্ষ বিশিষ্ঠ দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় ৭ কক্ষের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের কক্ষসহ ৩টিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাকী ৪টিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চলছে। উপর তলায় ৪টি কক্ষে সপ্তম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ২য় তলায় আরও রয়েছে স্মার্ট ক্লাস ও বিজ্ঞানাগার। এই ভবনটির প্রায় অধিকংশই স্থানই ধসে পড়ছে। আর এই ঝুকিপূর্ণ অবস্থাতেই শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন পাঠদানের কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছেন। ইতোমধ্যে নজীর আহম্মেদ নামে বিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্ম শিক্ষক ছাদের পলেসতারা খসে গায়ের উপর পড়ায় আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ বশীর আহম্মেদ বলেন আমাদের ভবন স্বল্পতার কারণে জীবনের ঝুকি জেনেও আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। তিনি আরও জানান এতিহ্যবাহী কামারখালী উচ্চ বিদ্যালযটি ১৯৭৩ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে জে.এস.সি পরীক্ষার কেন্দ্র ও এইচ. এস.সি ও পি.এস.সি পরীক্ষার ভেনু হিসেবে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই ঝুকিপূর্ণ ভবনটিতেই এইসব পরীক্ষা হয়ে থাকে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুকিপূর্ণ ভবনকে পরিতক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণ এবং বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ ভবন ও সম্প্রতি নির্মিত ভকেশনাল ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণের দাবী করে বলেন এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঠিক পরিবেশে ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক শামছুল হক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি দিলিপ মিত্র ও ইসমতারা লিপি বলেন আমাদের এই পুরাতন ভবনটি বারবার সংস্কার করে আমরা ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস নিচ্ছি। আরও জানান ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীর সেলের আঘাতে ভবনটি বিধ্বস্থ হয়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চৌধুরী রাকিব হোসেন ইরান বলেন- বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে এলাকার যুবসমাজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ১৯৬২ সালে এই পুরাতন ভবনটি নির্মাণ হয়। বিভিন্ন সময় এই ভবনটি সংস্কার করে আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কার্যক্রম চালাই। বর্তমানে ভবনটি ঝুকিপূর্ণ দেখা দিলে আমরা উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিম সুলতানা ও গৌরব বিশ্বাস জানান আমরা সবসময় ঝুকির মধ্যে ক্লাস করি। এ নিয়ে আমাদের অভিভাবকরা সবসময় চিন্তিত থাকেন। বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বললে তারা বলেন আমাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে ঝুকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করানোয় আমরা সবসময় উদ্বিগ্নের মধ্যে আছি।
বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, ফরিদপুর জোন মোহাম্মাদ হাসান শওকতের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কিছুদিন আগে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে ঐ পুরাতন ভবনে পাঠদান না করানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে আমাকে অবহিত করলে ব্যবস্থা নিব। মধুখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মনোয়ারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের চিঠি দিব ঝুকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না নেওয়ার জন্য।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মধুখালী ইউএনও সাহেবকে জানাব। উল্লেখ্য কামারখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষক ৬ জন কর্মচারী ও ৭৯২ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।