শুক্রবার সকাল ৯টা বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে জংসন স্টেশনে উত্তরা মেইল ট্রেন থেকে দলে দলে মৌসুমি ধান কাটার শ্রমিক নেমে এলো। তাদের প্রায় সবার হাতে একটি করে ব্যাগ। সেই সঙ্গে কারো হাতে কাস্তে, কারো হাতে বাঙ্গুয়া। সান্তাহার ষ্টেশনে এখন কয়েক শত মৌসুমি শ্রমিক। এদের বাড়ি উত্তর বঙ্গের নীলফামারী, দিনাজপুরের চিরির বন্দর, রংপুরের কাউনিয়া, গাইবান্ধা অঞ্চলে। উত্তরের জেলা থেকে কাজের সন্ধানে তারা দক্ষিণের জেলা সান্তাহার, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, জয়পুরহাটে ছুটছে। প্রতি বছরই তারা ইরি-বোরো মৌসুমে এই অঞ্চলে ধান কাটার কাজের সন্ধানে আসে। কাজ করে বাড়তি কিছু রোজগার করে আবার তারা ফিরে যায় নিজ অঞ্চলে।
দিনাজপুরের চিরির বন্দর এলাকার মৌসুমি শ্রমিক কফিল উদ্দীনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হামরা কামলা মানুষ। দিন মজুরি করি যে আয়-রোজগার হয়, তা দিয়ে হামার সংসার চলে। এখন হামার এলাকায় কোন কর্ম নাই। হামাকে সংসার চালানেরা জন্য নগদ টাকা নাই। বাড়িত বসি থাকলে সংসার খরচ কোটে পাব বাহে ? তার বেদন হামরা ২১ জন মিলি দল করি কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছি। এই এলাকায় সপ্তাহ দুই তিন থাকমু। এই এলাকায় এখন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হইছে। ১২-১৫ দিন কাম করির পাইলে সাত-আট হাজার টাকা নিয়া বাড়িত যাবা পাইম।
আনোয়ার নামে এক জন কৃষক জানান, বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, আর দুই ছেলে-মেয়ে আছে। যে কয় দিন তিনি বাড়ির বাইরে থাকবেন, সে কয় দিন এলাকায় দোকানদার কে বলে এসেছে। বাঁকিতে জিনিস দেবে। তিনি বলেন, হামরা বাড়ি ফিরি বাকির টাকা শোধ করিম।
তাইজুল নামে এক দিন মজুরি জনায়, তাদের আগে থেকেই মোবাইলের মাধ্যমে কদমা গ্রামের কৃষক মহাজন আজিজুল রহমানের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তার বাড়িতে থেকে তারা ধান কাটার কাজ করবে। রাতে তারা মহাজনের বাড়িতে বা স্কুলে থাকে। শ্রমিক নিতে আসা সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই সিদ্দিক বলেন, দুরত্ব অনুসারে ধান কাটা-মাড়াইয়ের দর নির্ভর করে। তাবে বিঘা প্রতি ২হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় সাধারনত এই শ্রমিকরা ধান কাটে। আবার খাবারও দিতে হয়।
সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের ইউপি সদস্য শিপলু খান জানান, গত বারের মতো এবারো এই এলাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমি শ্রমিক না এলে আমাদের ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো। কারণ আমাদের এলাকায় ধান কাটার শ্রমিক নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ কৃষক মৌসুমি শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তাদের মোবাইল নাম্বার রাখেন। ধান কাটার সময় হলে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তারা চলে আসে।
এ ব্যাপারে সান্তাহার জংসন ষ্টেশনের মাষ্টার রেজাউল ইসলাম ডালিম জানান, সপ্তাহ খানেক ধরে মৌসুমি শ্রমিকদের চাপে ট্রেনগুলিতে অনেক ভিড়। অনেকে ট্রেনের টিকিট কাটারও পরও বগিতে উঠতে পারে না। তখন তারা আমাদের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে বসে। তখন আমি তাদের ওই টিকিট দিয়ে পরের ট্রেনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।