যশোরের কেশবপুরের পশ্চিমাংশের সাধারণ মানুষ অৎানা আতঙ্কে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। রাত জেগে তারা দূর্বৃত্ব ধরতে পাহারা দিয়ে চলেছেন। ওসি মোঃ শাহিন সাংবাদিকদের বললেন অপপ্রচার ও স্রেফ গুজবের উপর ভিত্তি করে একটি কুচক্রীমহল সুপরিকল্পিতভাবে মহিলাদের মাধ্যমে গোটা উপজেলা ব্যাপী গুজব ছড়াচ্ছে। যার কোন সত্যতা নেই।
এদিকে প্রায়শঃ প্রচার চালানো হচ্ছে দুটি মাইক্রোবাসে করে একটি বোরকা পরিহিত বাহিনী এলাকায় ঢুকে বাড়ির সকলকে জিম্মি করে মহিলাদের সম্ভ্রমহানিসহ ধন-সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকার জনগণ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বলেও খবর রটানো হচ্ছে। বাস্তবে এর কোন ভিত্তি না না থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে গোটা উপজেলা ব্যাপী পাড়া মহল্লায় ছাত্রী, মহিলাসহ অভিভাবকরা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
আতঙ্কে গ্রামাঞ্চলের মহিলারা সন্ধ্যা নামার সাথেই ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা, জানালা বন্ধ করে দিচ্ছে। এসব এলাকার পুরুষেরা মহিলাদের সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ রক্ষায় সন্ধ্যার পরই বাজার সওদা সেরে বাড়ি ফিরছেন। অনেক বাড়িতে রাত ১১টার পর বাইরে বৈদ্যুতিক বাল্ব সারা রাত জ¦ালিয়ে রাখার খবর পাওয়া গেছে। কেশবপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী জানান, এ ধরনের কোন ঘঁনা ঘটেনি। আমি নিজেও তদন্ত করেছি কোন সত্যতা মেলেনি। এলাকার এক শ্রেনীর লুচ্চা গোষ্ঠি এাঁ প্রচার করছে মাত্র। উপজেলার লহ্মীনাথকাটি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান জানান, মঙ্গলবার শিকারপুর গ্রামে এক মহিলা ওই বাহিনীর হাতে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনা এলাকায় রটে গেলে মহিলাদের সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ রক্ষায় ১মে থেকে পাহারা দেয়া শুরু হয়েছে। মির্জাপুর গ্রামের তুহিন বলেন, শুনেছি বিভিন্ন এলাকায় নাকি ওই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে তাঁর মহল্লায় মিটিং করে একে অপরের কাছে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথেই মোবাইলের মাধ্যমে সবাই জড়ো হয়ে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শ্রীফলা গ্রামের আবদুল খালেক বলেন, তাঁর গ্রামে গত ১ সপ্তাহ ধরে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখনও পাহারা দেয়া শুরু না হলেও খুব তাড়াতাড়িই শুরু করা হবে। তবে এ ব্যাপারে জনগণ যথেষ্ট সচেতন রয়েছে।
শিকারপুর গ্রামের মেম্বার মনিরুজ্জামান মনির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে এলাকায় রটে যায় শিকারপুর কদমতলার আকরামের স্ত্রীর হাত ধরে নাকি কারা টানাটানি করেছে। এ নিয়ে ব্যাপক চেচামিচি হয়েছে। পরের দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর কোন সত্যতা মেলেনি। এমনকি থানা পুলিশও খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
সরেজমিনে মজিদপুর, হাসানপুর, বিদ্যানন্দকাটি ও মঙ্গলকোট ইউনিয়ন ঘুরে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা শুধু গুজবের কথা শুনেছেন। বাস্তবে কোন নারীর সম্ভ্রমহানী বা ডাকাতি হয়েছে এর কোন সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারছে না। এ ধরনের অপপ্রচার কারা রটাচ্ছে তাও কেউ বলতে পারছে না। উপজেলা ব্যাপী জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে একটি মহল অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। মজিদপুর ইউনিয়নে বসবাসরত সাংবাদিক শামসুর রহমান ও বাগদাহ গ্রামের বসবাসরত সাংবাদিক মশিয়ার রহমান জানান, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। সাধারণ মানুষকে ভীত সন্ত্রস্থ করতে একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
কেশবপুর থানার ওসি মো. শাহিন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের ঘটনা শুনে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। একটি মহল এলাকাকে অস্থিতিশীল করে পুলিশকে ব্যাকফুটে নেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মহিলাদের দিয়ে ওই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভীতি দূর করতে এলাকায় উঠান বৈঠক, সভা, সমাবেশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গ্রাম পুলিশরাও একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, যারা এর সাথে জড়িতদের অচিরেই আইনের আওতায় আনা হবে।