কুমিল্লার হোমনায় মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের তিন দিন পার হলেও ধরা পড়েনি ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত সুমন সরকার। বর্তমানে মেয়েটিসহ তার পরিবার মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে এ ঘটনায়। অভিযুক্ত সুমনকে দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। মেয়েটির নিরাপত্তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা না করা এবং ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতারের আশ^াস দিয়েছে প্রশাসন। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে গিয়ে গত রবিবার তার নির্বাচনী এলাকার এক মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের খবর পান। তার ((Selima Ahmad Merry MP) ফেইসবুক আইডি থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি পবিত্র জায়গায় থেকে এমন খবরে অত্যন্ত মর্মহত হওয়ার কথা বলেছেন। তার এক মিনিট উনচল্লিশ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় আরও বলেন- ধর্ষণ, খুন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের জায়গা হোমনা-তিতাসে নেই। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে ইউএনও আজগর আলী, হোমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ফজলে রাব্বী ও ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসর সুপার মাওলানা আবদুস সাত্তার মেয়েটির বাড়ি গিয়ে তাদের পাশে থাকার কথা বলেন।
মানববন্ধনে সুমনকে ধর্ষক, ইয়াবা ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীকর্মকা-সহ নানা মামলার আসামি উল্লেখ করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। বক্তারা দলের (আওয়ামী লীগ) কোনো পর্যায়ের নেতাদের পক্ষ থেকে তাকে (সুমন) আশ্রয় প্রশ্রয় না দেওয়ারও আহ্বান জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রেহানা মজিদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহাসিন সরকার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার রীনা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী ইলিয়াস, যুবলীগ নেতা কায়সার আহমেদ, হোমনা থানা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ভূঁইয়া, শ্রমিক লীগ নেতা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
ইউএনও আজগর আলী আমাদের সময়কে বলেন, এ ঘটনায় মেয়েটি মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। তবে মামলা হওয়ার পরে তারা ভয়ে ছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সব রকম সহযোগিতার আশ^াস দেওয়ার পর পরিবারের সবাই অকেটাই স্বাভাবিক হতে পারবে। তার পড়াশোনায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। মেয়ের ভাইয়ের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে সে (সুমন) আরও অনেকের সঙ্গেই ওইরূপ খারাপ আচরণ করেছে।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে রাব্বী বলেন, আমরা মেয়েটির বাড়িতে গেছি। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা একটু ছিল। তার পাশে থাকার কথা বলেছি। যাতে সে ও তার পরিবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সব রকম সহযোগিতাই আমরা করব। সুমনকে দ্রুত গ্রেফতার করব ইনশাআল্লাহ।
ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুস সাত্তার বলেন, বর্তমানে মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। খোলার পর মেয়েটি যেন স্বাভাবিকভাবে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার উপজেলার নবম শ্রেণির ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে জমিতে কাজ করা তার কৃষক বাবাকে ভাত খাইয়ে বাড়ি ফেরার পথে চিহ্নিত সন্ত্রাসী গণধর্ষণ, মাদকহ একাধিক আসামি সুমন সরকার দিন-দুপুরে; বেলা এগারোটায় তার পথ রোধ করে ভংগারচর গ্রামের জনৈক রজ্জব আলী মাস্টারের কাঠ বাগানের খোলা জায়গায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
গত শুক্রবার উপজেলার মাথাভাঙা ইউনিয়নের ভংগারচর গ্রামে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে হোমনা থানায় ধর্ষক সুমনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। মামলা করায় ছাত্রীর বাবা-মাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে সুমন অভিযোগ পরিবরের। তার বিরুদ্ধে এটি ছাড়াও ইতোপূর্বে হোমনা থানায় গণধর্ষণ, মাদক ও মারামারিসহ আরও সাতটি মামলা রয়েছে। গতকাল রবিবার মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কুমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ধর্ষক সুমনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় গত ২০১৭ সালে একটি গণধর্ষণ, ২০১৩, ’১৭ ও ’১৮ সালে তিনটি মাদক মামলা এবং এবং ২০১৫ সালে তিনটি মারামারির মামলা রয়েছে। সে বর্তমানে জামিনে থাকাবস্থায় গত শুক্রবার নবম শ্রেণির ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ করে।