রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক জাকির হোসেন। তিনি আমের গায়ে চিঠি লেখার এ রীতি ধরে রাখার জন্য এক অভিনব উপায় বের করেছেন। তিনি প্রতি বছর আম মৌসুমে মানুষকে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানান। তবে এ চিঠি রাজা-বাদশাদের মতো রেশমি কাপড়েও নয়, কাগজেও নয়। তিনি চিঠি লেখেন আস্ত আমের গায়ে। লিখে আমটিই পাঠিয়ে দেন প্রাপকের কাছে। তিনি এর নাম দিয়েছেন ফলের শুভেচ্ছা। তাঁর সব চিঠির প্রাপককেই লেখেন চিঠিটা পড়া হলে আমটা কেটে খাবেন। শুভেচ্ছাসহ আস্ত একটা আম পেয়ে জাকির হোসেনের প্রিয়জনেরা খুশিই হচ্ছেন। তেমনিভাবে গত ৬ মে একটি অনুষ্ঠানে ত্রান ও দূর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এমামুর রহমান ও তার স্ত্রীকে এবং ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান অনুকে তাজা ফল আমের শুভেচ্ছা জানান পল্লী চিকিৎক জাকির হোসেন।
দিঘা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন জানান, জাকির হোসেন ২০ বছর থেকে এভাবে আমের গায়ে চিঠি লিখে তাঁর নিকটতম বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের ও এলাকার বিশিষ্ট লোকজনের কাছে পাঠান। প্রতি বছর আম বড় হওয়ার পর থেকে তিনি চিঠি লিখতে শুরু করেন। চিঠিগুলো তিনি কুরিয়ারেও পাঠান। আবার এলাকায় কোনো বিশিষ্ট মানুষ কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে এলেও তিনি সেখানে তাঁর আমের চিঠি নিয়ে হাজির হন।
ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান অনু বলেন, জাকির হোসেনের তাজা আমের গায়ে লিখা চিঠি পেয়েছি। এতে জাকির হোসেন লিখেছেন, ‘মনে করুন, এই কাঁচা আমটি একটি সবুজ রঙের পতাকা। আর আমার লাল রঙের কালি হচ্ছে শহীদের রক্ত। হতে পারে এটি একটি লাল-সবুজের পতাকা। হতে পারে সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এবং লাল-সবুজের পতাকার উপমা করে এই আমের মাধ্যমে আপনাকে শুভেচ্ছা জানালাম। আমার শুভেচ্ছা নেবেন। ফলের শুভেচ্ছা দিলাম। ফুলের মতো এ উপহার শুকিয়ে যাবে না। এতে আপনার মনও ভরবে, খেলেও ভালো লাগবে।’
জাকির হোসেন জানান, মনের তৃপ্তিতে দীর্ঘ ২০ বছর যাবত এই কাজটি করে যাচ্ছি। কোন কিছু পাওয়ার আসায় নয়। মনের আনান্দে করছি। এ ছাড়া দিনদিন চিঠি লিখার প্রবনতা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই সাংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য নীরব আন্দলোন করে যাচ্ছি।
এছাড়া আমি ২০ বছর থেকে আমের গায়ে চিঠি লিখে মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যাম্যান, মেয়র, পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আসছি। এবার আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ শুভেচ্ছা জানাতে চায়। কিন্তু কিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমের চিঠির শুভেচ্ছা নিয়ে যাবো এ পথ তৈরী করতে পারছিনা। ইতোমধ্যে আমি যাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি, তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহ করতে পারছিনা। ফলে আমার একটি ইচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো।