রমজান শুরুর প্রথম ইফতার বাজারে মৌসুমের নতুন রসালো ফল লিচুর আগমন ঘটেছে। তবে বিক্রেতাদের দাবি আরো দুই তিনদিন থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত শুরু হয়েছে। কিন্তু দামটি সকলের নাগালের মধ্যে নেই। ফলে নি¤œ আয়ের মানুষ দাম শুনে চমকে উঠছে। এরা আপাতত ফলটি কিনলেও পরিবারের সদস্যগুনে কিনছেন। নতুন এই ফলটি রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর, সাহেববাজার ও উপশহর নিউ মার্কেট এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে নতুন ফল হিসেবে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছে, মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে দাম বেশি নিয়ে বেশি লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারীভাবে রমজানের বাজারে এখনও দাম নির্ধারণ না করায় সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় লিচু বিক্রেতা হাসমত আলী জানান, ‘মৌসুমের নতুন ফল লিচু উঠেছে। ফলটি কেনাও হয়েছে তুলনামুলকভাবে বেশি দামে। তাই কিনতে তো একটু বেশি দাম লাগবেই।’
উপশহর নিউ মার্কেট এলাকায় লিচু বিক্রেতা নাহারুল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুমের নতুন ফল হওয়ায় বাগান মালিকরাই তুলনামূলকভাবে বেশি নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে কিনতেও ক্রেতাদের তুলনামূলকভাবে দাম বেশি লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে আর কয়েকদিন পর বাজারজাতের জন্য লিচুসহ অন্যান্য ফলও উঠতে শুরু করবে, দামও কম থাকবে। তখন নি¤œ আয়ের ব্যক্তিরাও ফলটি কিনতে পারবেন।’ তবে সরকারিভাবে সকল পন্যের দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন লিচু বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতারাও। তাদের দাবি দাম নির্ধারণ থাকলে উভয়ের ক্ষেত্রেই কথার বকবকানি বন্ধ থাকে। শুধু রমজান মাস উপলক্ষেই নয়, সারাবছরের জন্যেই এই সিস্টেম চালু পূর্বক কার্যকারিতার লক্ষ্যে তদারকি করতে হবে।
এদিকে, লিচুর দাম বেশি হওয়ায় প্রতিটি ক্রেতাকেই অল্প করে ক্রয় করতে দেখা গেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার কিছু পরিমান জমিতে লিচুর আবাদ বেড়েছে। গত বছর ৪৭৬ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হলেও এবার তা ১৪ হেক্টর বেড়েছে। এবার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। তবে আগামিতে লিচুর চাষ আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘এখন বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচু চাষ হচ্ছে। গত কয়েক বছর থেকেই আমের পাশাপাশি শুধু লিচু চাষ করেই শতাধিক চাষি স্বনির্ভরতা পেয়েছেন। যে কারণেই দিনাজপুর ও পাবনার ন্যয় এ অঞ্চলেও লিচু চাষ ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। লিচু চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। যাদের দেখে অন্যদেরও লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এমন আগ্রহের ধারাবাহিকতা থাকলে আমের মতো এ অঞ্চলেও লিচু চাষে বিপ্লব ঘটবে।’
বাজারে দাম নির্ধারণ ও গুনগত মানের মনিটরিং করার বিষয়ে ক্যাব রাজশাহী সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অর্থদন্ড করা হচ্ছে। সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। তবে অভিযানে জরিমানার পরিমান বেশি করার জন্য আইনের সংশোধনী আনা প্রয়োজন। তাহলে জেলা প্রশাসনের অভিযানের মতো ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানকেও গুরুত্ব আকারে দেখবে অসাধু ব্যবসায়ীরা।