রমজানের শুরুতেই জমে উঠেছে বরিশালের ইফতার বাজার। গত তিনদিনে ইফতার বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন বিকেল তিনটার পর থেকেই নামিদামি ইফতার পণ্যের দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। বিকেল চারটার পর থেকে ফুটপাতের ইফতারের দোকানগুলোতে মধ্য ও নিন্মবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। সবমিলিয়ে রমজানের তৃতীয়দিনেই জমজমাট হয়ে উঠেছে বরিশালের ইফতার বাজার।
নগরীর ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরের চেয়ে এবার ইফতার আয়োজনে অনেকটা নতুনত্বের ছোঁয়া রয়েছে। ইফতার সামগ্রীতে নতুন রেসিপি যোগ হলেও দামে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে প্রতিবারের মতো এবারও বরিশালের ইফতার বাজার অনেকটাই নামকরা হোটেল-রেস্তোরাঁর দখলে রয়েছে। সাথে কিছু ফাস্টফুডের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে ইফতার পণ্য। এর বাইরে ঐতিহ্য অনুযায়ী, সড়কের পাশে মৌসুমী দোকানিরাও ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
অপরদিকে ইফতার বাজারের পাশাপাশি রমজানে ফলের বাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। যদিও গত বছরের মতো লিচু, আম-কাঁঠালের তেমনভাবে দেখা মেলেনি বাজারে। তবে খেজুর, পেয়ারা, পেঁপে, কলা, কমলা, আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, নাসপাতির দখলে রয়েছে বাজার। মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও দেখা মিলছে তরমুজের।
বরিশালের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর নামি-দামি রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলো ইফতার বিক্রির জন্য অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। রেস্তোরাঁর সামনে বাহারি নকশায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে ইফতার বিক্রির স্টল। যেখানে মুখরোচক নানা ইফতার পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। এরমধ্যে নগরীর ঐতিহ্যবাহী নাজেম’স, ফুড’জ, বনফুল, রোজগার্ডেন, গার্ডেন ইন রেস্তোরাঁ, হট প্লেট, হুপার্স, তাওয়া, কাজী ফার্মস, রিভার ক্যাফে, রয়েল, চায়না প্যালেস, কিচেনসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত সময় পার করছে ইফতার বিক্রিতে। গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও ইফতারের বাজারে পণ্য নিয়ে এসেছে হোটেল গ্রান্ড পার্ক, হুপার্সসহ বেশকিছু নামিদামি রেস্টুরেন্ট। যদিও এরা খুচরো ইফতার বিক্রির পাশাপাশি বেসিক, প্লাটিনাম, প্রিমিয়ামসহ নানান নামে প্যাকেজ ইফতার বিক্রি করে আসছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এ বছর শুরু থেকেই বরিশালের ইফতার বাজার আশানুরূপভাবে জমে উঠেছে। সময়ের সাথে সাথেবিক্রি আরও বাড়বে বলেও তারা আশাপ্রকাশ করেছেন।
নাজেম’স ইফতারের স্বত্তাধিকারী ফরিদুর রহমান রেজা জানান, প্রথমদিন থেকেই তাদের ইফতার সামগ্রী বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে। ইফতারিতে এখানে হাফ তেহারী, কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, মুরগি মোসাল্লাম, খাসির রান, গরুর কালো ভুনা পাওয়া যায়। এসব ইফতার আইটেমের দাম ১৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। পাশাপাশি শাহি জর্দ্দা, বুরিন্দা, চিকেন ফ্রাই, বোরহানি, ফিরনি, হালিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া পিঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, চিকেন কাবাব, চিকেন পুলি প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে।
আফসার মৃধা নামের এক ক্রেতা বলেন, দীর্ঘ সময়ের রোজা ও প্রচন্ড গরমে বাসায় ইফতার আয়োজন করাটা কষ্টকর। তাই বাজার থেকে ইফতার সামগ্রী ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে রমজান ও ইফতার বাজারকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন। প্রথম রমজান থেকে অদ্যবর্ধি জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআইয়ের অভিযানে প্রায় অর্ধলাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। পুরো রমজান মাসজুড়ে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।