দিনাজপুরে চাঁদাবাজির মামলায় অবশেষে পুলিশের হাতে আটক হয়ে এখন জেলহাজতে চাঁদাবাজখ্যাত সাংবাদিক একরামুল হক চঞ্চল।
দিনাজপুর সদর থানায় গত ৮ মে দায়েরকৃত মামলার এজাহারসুত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর উপশহর এলাকার মোঃ আলমগীর হোসেনের একটি মামলায় পুলিশ গত বুধবার দিবাগত রাতে তাকে আটক করে। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছে। মামলার বাদি আলমগীর জানান, ভূয়া সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদান করে চাঁদা দাবি ও গ্রহন এবং আমার সঙ্গে প্রতারণা করায় উক্ত মামলা দায়ের করেছি। এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বজলুর রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। আলমগীর হোসেন নামের একজনের দায়ের করা এজাহারের প্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হয়। তাকে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল এ বিষয়ে বলেন, আটক একরামুল হক চঞ্চল দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সদস্য নয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশই হল সাংবাদিকদের কাজ। কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে প্রতারণাপূর্বক অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে তার দায়িত্ব তার নিজের। প্রশাসনের কাছে দাবী জানাই, এ ধরনের সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের আইনের আওতায় আনা হোক। চিরিরবন্দর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ উল আলম জানান, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসে, হেনা বেগম নামে একজন মহিলা শ্লীলতাহানিসহ চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ করেছিল। পরবর্তিতে তারা নিজেরাই মিটমাট করেছে। আমরা সাংবাদিকগণ তার জন্য বিব্রত।
কথিত সাংবাদিক একরামুল হক চঞ্চলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মৃত মফিজউদ্দিনের ছেলে ও দিনাজপুর সদর উপজেলার চাউলিয়াপট্টি কাঞ্চনকলোনী ঈদগাহমাঠ সংলগ্ন মৃত কানতিয়া হকের জামাতা। সে ছোটবেলা হতেই বিভিন্ন ছোটখাট অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে একটি ছোট প্লাষ্টিক কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেয়। পরবর্তিতে মালিককে হটিয়ে নিজেই কর্ণধার হয়। সেসময় বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথাবার্তা ও কার্যকলাপের কারণে পরবর্তিতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে সে ঢাকা থেকে পালিয়ে এসে দিনাজপুরে বিভিন্ন পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ও এলাকায় চাঁদাবাজি ও পল্লী এলাকার গরীব অসহায় মেয়েদের ফুসলাইয়া অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে দিয়ে কমিশন বানিজ্য শুরু করে। এছাড়াও এক শ্রেণির মহিলাদের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে কৌশলে ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা শুরু করে। চিরিরবন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাঃ আফতাব আহমেদের কাছে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেক সময় পারিবারিক ঝগড়াতে একপক্ষকে দিয়ে অপরপক্ষকে ফাঁসাতে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানীর মিথ্যা মামলা করে টাকা আদায় করা কাজ নিয়মিত হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের আগষ্ঠ মাসে চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের গালতৈড় কাচলডাঙ্গা নামক এলাকার জনৈক রেহেনা বেগমকে দিয়ে অশ্লীল ভিডিও ছড়ানো আইনে মামলা করে স্থানীয় ৮ জনের কাছে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তিতে মামলাটি পুলিশ সুপারের সরজমিন তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ২০১৩ সালে চিরিরবন্দরে বাড়িভাড়া নিয়ে গোপনে অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু করলে এলাকাবাসি প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠলে সে গোপনে বাসা ছেড়ে দিয়ে দিনাজপুর শহরে শ্বশুরের বাসায় চলে যায়। সে সাংবাদিকতার আড়ালে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে গোপনে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। তার আটকের খবর চিরিরবন্দরে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র খুশির ইমেজ ছড়িয়ে পড়ে।