ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে সোনালী মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার মৌসুম। একদিকে এলো মেলো বাতাসে যেমন দুলছে ধানের শীষ অন্য দিকে বাতাসের তালে তালে কৃষকের অন্তরে দোল খাচ্ছে দু’চোখ ভরা স্বপ্ন। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় ইতিমধ্যই উপজেলার মাঠে শুরু হয়েছে প্রধান ফসল আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার কাজ। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে ও কোন প্রকারের প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দিলে এবার ধানের বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা ও কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু ১ মন ধান বিক্রি করে একজন কামলার মজুরির টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। যে কারনে কৃষকরা ধান নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। বর্তমান ধানের বিক্রয় মুল্য দিয়ে খরচের টাকা উত্তোলন করা কষ্ট কর। কৃষকরা বলছে একেকজন কামলার (দিনমজুর) মজুরি উঠেছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এক মণ ধান বিক্রি করেও একজন কামলার মজুরি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। কারণ বাজারে বর্তমানে এক মণ ধানের দাম প্রকার ভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
কালীগঞ্জ উপজেলার সব স্থানে ও সব যায়গায় একই ভাবে মজুরির টাকা দিতে হচ্ছে। ধান কাটার শ্রমিক সংকটে ভুখছেন কৃষকরা এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কোন প্রকার বিপাকে পড়তে হয়নি ধান চাষিদের। খোজ নিয়ে জানা যায়, কালীগঞ্জে এবার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে এক জন শ্রমিক সংগ্রহ করতে হচ্ছে।অতিরিক্ত মুজুরি হওয়ায় স্কুল পরুয়া ছাত্ররাও ধান কাটা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে, এই বিষয়ে কৃষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এবছর ধান চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে, শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মুজুরি দিয়ে দিয়ে কাজ করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদেরকে। অন্ন্য দিকে ধানের দাম ভালো না থাকায় দুশচিন্তায় কৃষকেরা, যার জন্য এবছর হাসি ছাড়ায় ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। সেখানে রোপন হয়েছে ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া ও প্রকৃতি ধান চাষের অনুকুলে থাকায় মাঠে তেমন কোন রোগ বালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায়নি। বিগত সময়ের চাইতে এবার ধানের রেকর্ড পরিমান ফলন হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ধানের বাজার ভালো থাকলে কৃষকরা বিগত সময়ের লোকসান কাটিয়ে লাভবান হতে পারবেন।
কৃষকরা বলছে এবার প্রচন্ড গরমের কারনে কামলাদের মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার কামলাদের সংখ্যা অনেক টা কম। বিগত বছর গুলোতে বাইরে থেকে একাধিক কামলারা কালীগঞ্জে আসতো, কিন্তু এবার কামলাদের সংখ্যা অনেক টা কম। ফলে মজুরির পরিমান টা অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। একজন কামলা ব্যাক্তি সকাল ৭ টায় জমিতে ধান কাটতে যাচ্ছে আর দুপুর ২ বাজলে তারা বাড়ি চোলে যাচ্ছে। অনেক সময় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে ঝড় ও বৃষ্টির ভয়ে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০মন পর্যন্ত ধান উৎপাদন হয়েছে। এমনিতেই ধানের দাম কম আবার সার,কীটনাশক, পানির মটর, ও ডিজেলের দোকান ব্যবসায়িরা হালখাতার চিঠি দিয়েছে। কৃষকরা বলছে একদিকে ধানের দাম কম অন্যদিকে হালখাতার চিঠি। লোকসানে ধান বিক্রি করে মহাজনদের টাকা পরিশোধ করতে হবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল ইসলাম বলেন এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ও প্রকৃতি ধানের পক্ষে রয়েছে। কৃষকরা বলছে এবার ফলন ৩৫ থেকে ৪০ মণ হারে পাওয়ার আশা করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, এবার মাঠে ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন রয়েছে। তন্মধ্যে ইরি ৫০ ও ৬৩,ইরি ২৮.স্বর্না,সুবলতাসহ বিভিন্ন জাতের ধান রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৯৮ টি গ্রাম রয়েছে,মৌজা রয়েছে ১৮৮ টি। এ ছাড়া কৃষি অফিসের হিসাব মোতাবেক মোট আবাদি জমি রয়েছে ২২ হাজার ৩১২ হেক্টর জমি। নিট ফসলি জমি রয়েছে ৪৯ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমি। মোট ফসলি জমি রয়েছে ৩২ হাজার ৩১২ হেক্টর জমি। এ উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। কৃষকরা বলছে ধানের ফলন ভাল রয়েছে ক্ষেতে কিন্তু ধান কাটার জন্য মজুরিদের পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যবার কালীগঞ্জ শহরের কামলার হাট বসে কিন্তু কামলাদের হাট বসছে না। ফলে কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে পড়ছে মহা সমস্যায়।
কামলায় কাজ করা ব্যাক্তিরা বলছে বর্তমানে রোদ গরমে তারা মাঠে ঠিকমত কাজ করতে পারছে না। জীবনের ঝুকি নিয়ে ও অভাবের তাড়নায় ধান চাষিদের জমিতে কাজ করতে হচ্ছে। তারা বলছে সামান্য সময় কাজ করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে। প্রচন্ড গরমের কারনে তারা মজুরি বেশি নিচ্ছে বলে জানান। অনেকে রোদ গরমের কারনে কাজ করতে আসছে না। ফলে কামলাকারিদের সংখ্যা কম হয়েছে এবছর।