রংপুরের পীরগঞ্জে এক মন ধানের মুল্যে এক জন কামলাও মিলছে না। চলতি ইরি-বোরো মওসুমে পীরগঞ্জে কর্মসৃজন কর্মসুচি চলমান থাকায় এবং ধানের বাজারে ধ্বস নামায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ভরা মওসুমে তাই ধান কাটা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বোরো মওসুমে পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নের ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। মজুর সংকটের কারনে ধান কর্তন করতে পারছেন না চাষীরা। তারা শুধুই ফসলের মাঠ প্রত্যক্ষ করে শান্তনা পাওয়ার চেষ্টা করছে অনেকেই। এদিকে আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেই বুক শুকিয়ে যাচ্ছে কারও কারও। কৃষকরা জানায়, এমনিতে দেশে এ সময় ঝড় ও শিলা বৃষ্টিসহ প্রতিকুল আবহাওয়া বিরাজ করে, তারপরেও তারা যদি সময় মত ধান কেটে ঘরে উঠাতে না পারে তবে অনেকেই শেষ মুহুর্তে এসে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। বর্তমানে পীরগঞ্জে কর্মসৃজন কর্মসুচি চলমান থাকায় কৃষানের চরম সংকট চলছে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দফতর জানিয়েছে, চলতি মওসুমে পীরগঞ্জে কর্মসৃজন কর্মসুচির অধীনে ৪ হাজার ৭ শত ৯৭ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক হিসেবে স¤পৃক্ত রয়েছেন। গত ২৯ এপ্রিল ওই কর্মসুচি শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ৪০ কর্ম দিবস পর্যন্ত। তাই ওই বিপুল পরিমান মজুরের ধান কর্তনে স¤পৃক্ততার কোন সুযোগই নেই। সরেজমিনে উপজেলার রসুলপুরের আয়নাল হক,আব্দুস সালাম, জয়নাল আবেদীন,মরারপাড়ার রজরুল ইসলাম,নাজমুল হোসেন, রওশনপুরের মকবুল,মিয়াজান আলী,তবারক হোসেন, ভেন্ডাবাড়ি মিলকি, হরিপুর, মির্জাপুর, ভীমশহর, আগা চতরা,কাঙ্গুরপাড়া,বদনাপাড়া.কাটাদুয়ার,চকভেকা,অনন্তপুরসহ বেশ ক’টি গ্রাম ঘুরে সাধারণ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান নিয়ে তাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা। ধান কর্তনের পুরো মওসুম চললেও পুরো ফসলের মাঠ ভরে গেছে পাকা সোনালী রং এর ধানে। চাষীরা মজুরের অভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। কাঙ্গুরপাড়া গ্রামের কৃষক জুয়েল মিয়া, চকভেকার আব্দুল গফুর আলী, বদনাপাড়া গ্রামেরমিয়াজান আলী,রইচ উদ্দিন জানান,মজুর সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে উচ্চ মুল্যে ধান কাটতে হচ্ছে। এবারে প্রতি একর জমির ধান কর্তনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা বেশি। অপরদিকে বাজারে প্রতি মণ ধানের মুল্য ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকা। আর একজন কৃষাণের মজুরী দু’বেলা খাবারসহ ৫’শ টাকা। ফলে এক মণ ধানে একজন মজুরের মজুরীর পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই চড়া মূল্যে ধান কর্তন করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই কৃষকেরা মনে করছেন,এ সময় কর্মসৃজন কর্মসুচি স্থগিত থাকলে মজুর সংকট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে এবং কৃষকদের ধান কর্তনে সহায়ক হবে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বোরো মওসুমে কর্মসৃজন কর্মসুচিতে শ্রমিক সম্পৃক্ত থাকায় চাষীরা ধান কাটতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে এটি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখলে কৃষকরা উপকৃত হতো।