আশাশুনি উপজেলার কুল্যা এলাকার ডলার চক্রের গডফাদাররা আবার নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। তাদের অবৈধ কারবারের রুট চেঞ্জ করে এখন বুধহাটা- শোভনালী-কালিগঞ্জ-দেবহাটা রুটে সরগরম কারবার শুরু করেছে।
উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নে ডলার চক্রের গডফাদাররা তাদের রাজত্ব কায়েম করে অনেক আগে থেকে। বাহাদুরপুর, কুল্যা, মহাজনপুরসহ আশপাশের নির্জন স্থানে তারা আস্তানা গেড়ে বেশ জমিয়ে প্রতারণার ফাঁদ ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বেশ মজবুত কারবার করে আসছিল। পুলিশের বিশেষ ভূমিকায় গডফাদাররা তাদের কারবার উপজেলার সীমানা পেরিয়ে তালা উপজেলার কয়েকটি দুর্গম ও নির্জন স্থানে নতুন আস্তানায় স্থানান্তর করে। ইতিমধ্যে অনেকবার তাদের উপর আক্রমন হয়েছে, ধরাও খেয়েছে, পত্রপত্রিকায় অনেকগুলো খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকে তারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে থমকে ছিল। সম্প্রতি গডফাদাররা তাদের রুট কুল্যা ইউনিয়ন ও তালা উপজেলা থেকে পরিবর্তন করে বুধহাটা, শোভনালী, চাম্পাফুল হয়ে কালিগঞ্জ, দেবহাটা উপজেলার নির্জনে আস্তানা গেড়েছে। তালা উপজেলার মুড়াগাছা গ্রামের বাহাউদ্দিন সরদারের পুত্র ওছমান ও আশাশুনি উপজেলার খলিসানী গ্রামের মৃত আলি গাজীর পুত্র নুরুল ডলার চক্রের দু’ সদস্য গত ৮ মে বুধহাটার পাইথালী এলাকায় ধরা পড়ে। এসময় তাদের কাছ থেকে ভারতীয় বিড়ির পলি প্যাকের মধ্যে রাখা একটি স্বর্ণের পয়সা পাওয়া যায়। তারা জানায় তাদের গডফাদার কুল্যা গ্রামের আঃ সাত্তার (দন্ত চিকিৎসক) এর পুত্র মিজান তাদেরকে পয়সাটা দিয়েছে। কুল্যার সেই পুরনো ডলার চক্রের গডফাদারদের শীর্ষ নেতা মিজান তার কৌশল পরিবর্তন করে সদর উপজেলার হাবাশপুরের একটি নির্জন আম বাগানে আস্তানা গেড়ে স্বর্ণের পয়সা দেখিয়ে কিম্বা কম মূল্যে ডলার বিক্রয়ের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা করে থাকে। তার সহযোগি হিসাবে কাজ করার জন্য রয়েছে ২০/২৫ জন সক্রিয় সদস্য। যাদের ব্যবহার করে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগতদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে।
৮ মে আটক হওয়াদের আইনের হাতে তুলে না দিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ায় কারবারের সাথে জড়িতদের বিশেষ করে গড ফাদারকের ধরাছোয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। মিজানের কাছে অবিকল একই রকমের ১৪ শত পিচ স্বর্ণের পয়সা রয়েছে বলে ধৃতরা জানালেও সেগুলো উদ্ধারের কোন উদ্যোগ নজরে আসেনি। এলাকার অনেকে জানায়, মিজান স্বর্ণের পয়সা তৈরি করেছে গুনাকরকাটি গ্রামের মিন্টু স্বর্ণকারের কাছ থেকে। মিন্টুর গুনাকরকাটি বাজারে একটি জুয়েলারীর দোকান আছে। ইতিপূর্বে কয়েকবার মিন্টু বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের নজরে আসলেও মিজানের কারবারের স্বর্ণের পয়সা উদ্ধার হয়নি। কুল্যা গ্রামের ভাড়ায় মটর সাইকেল চালক রফিকুল জানান, তিনি মিজানের সাথে অনেক দিন চলাফেরা করতেন। ডলার কেনাবেচা কারবারের বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে সন্দেহ জনক মনে হলে তাদের পিছু নেয়। তারা ইঞ্জিন ভ্যানে পাইথালীর দিকে রওয়ানা হলে রফিকুল কুঁন্দুড়িয়ার ইউপি সদস্য’র ভাই আনারুলকে ফোনে বিষয়টি বললে তিনি পথিমধ্যে ভ্যান থামিয়ে তাদেরকে আটকে স্বর্ণের পয়সা উদ্ধার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আনারুলসহ অন্যরা মুচলেকা নিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে ডলার চক্রের সদস্য আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় এলাকার দীর্ঘদিনের ডলার চক্রের দাপট আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। এব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। আনারুল ইসলাম সাংবাদকিদের বলেন, মুচলেকা নিয়ে আটককৃত দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণের পয়সা তাদের কাছে রয়েছে।