হোমনায় নবম শ্রেণির মাদ্রসাছাত্রী (১৫) ধর্ষণকারী এবং ৮ মামলার আসামি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সুমন সরকারকে (২৯) গ্রেফতার করেছে হোমনা থানা পুলিশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার দুপুরের দিকে পার্শ্ববতী মেঘনা উপজেলার মুগারচর রাধানগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তার এক নিকট আত্বীয়ের বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে গতকাল শনিবার তাকে কুমিল্লা কোর্টে পাঠানো হয়েছে। ধর্ষণকারী সুমন গ্রেফতার হলেও তার পরিবারের সদস্যেদের হুমকিতে চরম নিরাপত্তহীনতার মধ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রীর।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হোমনা থানার এসআই মো. ফারুক ইসলাম এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ মেঘনা উপজেলার মুগারচর গ্রামে তার এক নিকট আত্বীয়ের বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষণকারী সুমন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তার পিছু নিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। গতকাল শনিবার তাকে কুমিল্লা কোর্টে পাঠানোর আগে সুমন পুলিশের কাছে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে ধর্ষণকারী সুমনের গ্রেফতারের খবর শুনে এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সর্বস্তরের মানুষ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের ঘঁনায় পুরো উপজেলায় নিন্দার ঝড় উঠে। ন্যাক্কারজন এই ঘটনার ও ধর্ষণকারী সুমনকে গ্রেফতারের দাবি উঠে সবমহল থেকে। গত রবিবার ন্যাক্কারজন এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং সুমনকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে উপজেলা সদরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেহানা মজিদের নেতৃত্বে সর্বস্তরের শ্রেনীপেশার মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে শুক্রবার সকাল ১১টার সময় মাদ্রাসাছাত্রী ভংগারচর গ্রামের জমিতে কাজ করা তার কৃষক বাবাকে ভাত খাইয়ে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় একই গ্রামের রেজাউল করিম ওরফে রাজা মিয়ার ছেলে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সুমন সরকার ছাত্রীটিকে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পাশের রজ্জব আলী মাস্টারের কাঠ বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা জানাজানি করলে ছাত্রীটিকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়ে শাষিয়ে চলে যায় সুমন। ভিকটিম বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে গত ৪ তারিখ, শনিবার রাতে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে সুমনকে একমাত্র আসামি করে হোমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে সুমনের পক্ষের কিছু লোকজন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। সুমনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় গত ২০১৭ সালে একটি গণধর্ষণ, ২০১৩, ’১৭ ও ’১৮ সালে তিনটি মাদক মামলা এবং এবং ২০১৫ সালে তিনটি মারামারির মামলা রয়েছে। বর্তমানে সে জামিনে থাকাবস্থায় গত শুক্রবার নবম শ্রেণির ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ করে।
গতকাল শনিবার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বী ও এস আই মো. সফিউদ্দিন পরিবারের খোঁজ নিতে মেয়েটির বাড়িতে গেলে ধষিতা মাদ্রসাছাত্রী তাদের জানান, সুমন জেল থেকে বেরিয়ে এলে তার পরিবারের সবাইকে একটা একটা করে ধরে জবাই করার হুমকি দিচ্ছে তার বোন রেহেনা। তারা এখন চরম নিরাপওাহীনতার মধ্যে আছে। তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তিনি।
হোমনার থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মো.ফজলে রাব্বী বলেন, গতকাল শুক্রবার মেঘনা উপজেলার মুগারচর রাধানগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সুমনকে আটক করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই সময় পুলিশের সাথে তার ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে সে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে। তার আরও একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথাও জানিয়েছে। সুমনের বিরদ্ধে থানায় গণধর্ষণ, মাদক ও মারামারিসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে।