দীর্ঘদিনের খানাখন্দে ভরা নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চলছে সংস্কার কাজ। এ কাজের প্রায় সব করা হয় অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে। এ ছাড়া পাথরসহ মানসম্পন্ন সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর করা নিয়ম অনুযায়ী সংস্কার কাজের টেন্ডারে যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে থাকে তাদের পাঁচ বছরের শর্ত দিয়ে থাকেন বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই সময়ের মধ্যে সড়কে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায়-দায়িত্ব ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিতে হবে।
মেয়রের শর্ত অনুযায়ী-মানসম্মত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্কার কাজে ব্যবহার করা সামগ্রী হতে হবে উচ্চমানের। যেমন সংস্কার কাজে ইট নয় পাথর ব্যবহার করতে হবে। মানসম্পন্ন বিটুমিনসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার, কাজের সময় সড়কের তাপমাত্রাকে গুরুত্ব দেওয়া, সংস্কার কাজে বেভার মেশিন, এসপল্ট মিক্সি প্লাট, তিন ধরনের রোলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সংস্কার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর মান যাচাইয়ের কাজ করে থাকেন বিসিসি’র প্রকৌশলীরা। আর গুণগত মানসম্পন্ন কাজ নিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ কাজটি সরাসরি তদারকি করেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ফলে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। এর সুফলও ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারুন্যের প্রতীক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর বেশকিছু সড়ক জরুরী ভিত্তিতে টেকসই সংস্কার করা হয়। আর এ কাজে আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরীর আমতলার বিজয় বিহঙ্গ থেকে শুরু হয়ে জিলা স্কুলের মোড় হয়ে সদর রোড, স্ব-রোড, পশালপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটারের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার কাজ সদ্য শেষ হয়েছে। আর গত শুক্রবার রাতে নগরীর জেল খানার মোড় থেকে হাসপাাতাল রোড হয়ে বিএম কলেজ রোড থেকে নথুল্লাবাদ বাস টামিনাল পর্যন্ত সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আড়াই কিলোমিটারের এই সড়ক আগামি সাতদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
নগরীর ২নং ওয়ার্ডের কাউনিয়ার তারিনী কুমার সড়কটি (জেলে বাড়ি পুল) প্রায় সাত মাস আগে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে কয়েক হাজার যানবাহনসহ ট্রাক, লড়ি চলাচল করলেও বর্তমানে সড়কটির সংস্কার করা অংশ অক্ষত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগামি কয়েক বছরে সংস্কার করা অংশে আর কাজ করতে হবেনা। অথচ বিগত মেয়রদের সময় সংস্কার কাজে নিন্মমানের ইটসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করায় এলাকাবাসী সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো। সূত্রমতে, সড়কটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে লঞ্চঘাট যাতায়াতে বাইপাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন এই সড়কে যানবাহনের চাঁপ বেশি থাকে। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সংস্কার কাজে ইট নয় পাথরসহ মান সম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
জিলা স্কুলের একাধিক শিক্ষক বলেন, বর্তমানে যেভাবে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে অতীতে এভাবে আর কখনো হয়নি। সংস্কার কাজে যেসব উপকরন ব্যবহার করা হয়েছে তা দেখে যে কেউ কাজের সন্তোষ প্রকাশ করবেন। কারণ কাজ চলার সময়ই ব্যবহৃত উপকরণ সমূহ দেখে অনুমান করা যায় কতোটা সুপরিকল্পিত ভাবে টেকসই করা হচ্ছে। নগরীর আমতলা মোড়ের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, মেয়রের কাজের গতি ও ধরন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ও প্রশংসনীয়। এভাবে নগরীর সব সড়কে কাজ হলে বরিশাল নগরীর সড়ক উন্নয়নে দীর্ঘস্থায়িত্ব পাবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন-শুধু লোক দেখানো উন্নয়ন নয়, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিছিলো টেকসই উন্নয়ন। কারণ টেকসই উন্নয়ন না হলে শুধু অর্থের অপচয়ই হয়না; এতে ভোগান্তিও ডেকে আনে। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কাজ দেখে মনে হচ্ছে বরিশাল নগরীকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার কাজে ইতোমধ্যে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রশংসার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পাশাপাশি নগরীর থেকে জলাবদ্ধতা দুরকরণেও তিনি (মেয়র) উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে নগরীর জলাবদ্ধাতার কারণ হিসেবে ড্রেনে পলি জমে ভড়াট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিজে স্ব-শরীরে খুঁজে বের করে তা অপসারনে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় জলাবদ্ধতা কমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, এককথায় নগরীতে টেকসই উন্নয়ন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর হাত ধরেই চলমান রয়েছে।
বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, নগরীর সড়কগুলো সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টন ওজন বহনে সক্ষম কিন্তু ২০ থেকে ২৫ টন নিয়ে ট্রাক বা লড়ি নগরীতে প্রবেশ করে। এতে সড়কের স্থায়ীত্ব কমে যায়। ফলে ওভার লোডের গাড়ি নগরীতে প্রবেশে মেয়র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি (মেয়র) নিজে এরকম বেশ কিছু গাড়ি আটক করেছেন। সব মিলিয়ে উন্নয়ন কাজ শেষ হবার পর তা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ইতোমধ্যে মেয়র নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তবে এজন্য নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সংস্কারের ক্ষেত্রে সংস্কারধীন সড়কে কমপক্ষে সাতদিন মোটরসাইকেল কিংবা ভারী যানবাহন পার্কিং না করার জন্য জনসাধারণের সহযোগিতা চেয়েছেন ডিজিটাল সিটি মেয়র খ্যাত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেয়র বলেছেন-নগরীর উন্নয়নে বিভিন্ন এলাকায় বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তিতে রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তাগুলো পুরু হওয়ায় সেগুলো শক্ত হতে কমপক্ষে সাতদিন সময় লাগে। তাই কাজ চলমান অবস্থায় রাস্তায় মোটরসাইকেল বা এ ধরনের অন্যান্য যানবাহন পার্কিং করায় রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে রাস্তাগুলো যাতে কোন ধরনের ক্ষতি না হয়, সে লক্ষ্যে জনস্বার্থে নতুন রাস্তার নির্মাণ কাজ চলাকালীন সাতদিনের মধ্যে মোটরসাইকেল বা ভারী যানবাহন পার্কিং না করে অন্যত্র পার্কিং করার জন্য মেয়র বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, টেকসই উন্নয়নের মধ্যদিয়ে সম্পদের অপচয়রোধ করা সম্ভব। নগরীর চলমান সড়ক উন্নয়নের কাজ নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার চিন্তা কিছু টাকা বেশি গেলেও একবারে টেকসই কাজ করা। বরিশালবাসীর কাছ থেকেই শুনেছি, বরিশালে এ ধরনের রাস্তা আগে কখনোই হয়নি। আবার এও শুনেছি আর বিগত দিনে বছরে এক রাস্তার পেছনে তিন থেকে চারবার অর্থবরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু আমার চিন্তা কিছু টাকা বেশি গেলেও একবারে টেকসই হবে রাস্তা। আর বার বার খরচ না করলে, যে টাকা থাকবে, তা আমি বর্ধিত এলাকার রাস্তার পেছনে ব্যায় করা হবে।