চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ৭টি সাংগঠনিক ইউনিটসহ প্রায় সব কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। একই অবস্থা দলের অঙ্গ সংগঠনসমুহেরও। আর ওই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মাঠের কার্যক্রম। গত ১১ মে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় নেতাদের বক্তব্যে সংগঠনের এমন সংকটময় চিত্র ফুটে উঠে। অথচ প্রতি তিন বছর পরপর কমিটি করার কথা উল্লেখ রয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্রেই। ওই সভায় সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটির বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। তবে জেলা ও উপজেলা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নেতাদের বক্তব্যেই প্রকাশ্যে উঠে আসে। এ সময় নেতাদের বক্তব্য শুনে আগামি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি নতুনভাবে করার নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দও।
একাধিক সূত্র জানায়, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দারবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এসকল জেলা কমিটির আওতাধীন থানা, উপজেলার ও পৌরসভার কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুনভাবে সম্মেলন করা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ঈদের পরেই এসব কমিটি নতুন করে করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও আগামি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নতুনভাবে করার জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে আদৌ নতুন কমিটি হবে কিনা তা নিয়ে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ অনেকেই দলের পদ ভাগিয়ে নিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। কর্মীদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। এতে তৃণমুলের অনেক কর্মী হতাশ বলে জানাগেছে। অন্যদিকে ওই বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতাদের বক্তব্যেই প্রতিটি জেলা ও উপজেলার সাংগঠনিক চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রায় সব আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেক নেতা বক্তব্যকালে কৌশলে স্বস্ব জেলার সাংগঠনিক প্রতিবেদন দিতে চাননি। কয়েকজন নেতা ভুল তথ্যও দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিটি জেলা ও উপজেলার সর্বশেষ সম্মেলনের তারিখসহ জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর নগরে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। সে সময় থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠন পরিচালনা করে আসছি। ২০১৭ সালে ১৫ ডিসেম্বর সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা গেলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিটি বিলুপ্ত ও নতুন কমিটি না করার জন্য একটি নির্দেশনা পেয়েছিলাম। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম বলেন, উত্তর জেলার সাতটি উপজেলা আছে। এ উপজেলাগুলোতে সম্মেলন হয়েছে সন্দ্বীপে ২০১১ সালে, সীতাকুন্ডে ২০১২ সালে, রাউজানে ২০১২ সালে ও ফটিকছড়িতে ২০১৬ সালে। যেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলোতে সম্মেলন করা হবে। ঈদের পরেই সভা করে কমিটি গঠনের কার্যক্রম গ্রহণ করবো। সকল ইউনিয়নে কমিটি আছে। রাউজান ও হাটহাজারী আওয়ামী লীগের সভাপতি মারা যাওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে।
বাকিগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে। ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কমিটিও আছে। তবে বেশিরভাগ কমিটি নতুন করে করতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি উপজেলায় দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আটটি সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে চারটির সম্মেলন করতে পেরেছি। চারটির এডহক কমিটি আছে। সেগুলোর সম্মেলন দ্রুত করবো। ৯০টি ইউনিয়ন ও ৩শ’২০টি ওয়ার্ড আছে। প্রত্যেক ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কমিটি আছে। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি প্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ। কেন্দ্রীয় কমিটি যখনই বলবেন তখনই পুর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।