জামালপুরে ইরি-বোরো ধানকাটা কৃষি শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও একমণ ধানের দামে মিলছে না একজন ধান কাঁটা কৃষি শ্রমিক। শ্রমিক সংকটে সময়মতো ধান কাটতে না পেরে হতাশায় পড়েছেন অনেক কৃষক। বর্তমানে জনপ্রতি শ্রমিক মজুরি দিতে হচ্ছে ৩ বেলা খাবার খেয়ে সাথে পান-বিড়ি সিগারেটসহ দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা। এতে জনপ্রতি মজুরি পড়ছে প্রায় ৭শ টাকা। এদিকে বাজারে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫৫০-৬০০ টাকা। ফলে একমণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের বেতন দিতে না পেরে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। মেলান্দহ নাংলা গ্রামের কৃষক আনিছুল হক, চান মিয়া, নজরুল সুমনসহ বেশ কয়েজন কৃষক জানান, বোরো চাষে জমি প্রস্তুত, চারা রোপন, সেচ, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিস্কার, ধানকাটা শ্রমিক খরচসহ প্রতিমণ ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৮শ থেকে ৯শ টাকা। এতে ধান চাষ করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জেলার ৭টি উপজেলার শ্রমিক স্বল্পতার কারণে মাঠের পাঁকাধান কেটে এগুতে পারছেনা কৃষকরা। ধান পাঁকার সাথে তাদের উৎপাদিত ফসল দ্রুত কেটে ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত। ইরিÑবোরো ধানের শত্রু কালবৈশাখী শিলা বৃষ্টি,ঝড়-তুফান। তাই আকাশে মেঘ দেখলেই কৃষকরা আতঙ্কিত দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই চড়া মূল্যে কৃষকরা শ্রমিক নিয়ে ধান কাটার যেন প্রতিযোগীতা চালিয়ে যাচ্ছে মাঠেÑঘাটে।
শ্রমিক সংকটের মুল কারণ বেশিরভাগ শ্রমিক শহরে বন্দরে রিক্সা-ভ্যান, ভটভটি, নছিমন, করিমন, আবার অনেকেই অটো রিক্সা সিএনজি’র মালিক হয়ে পেশা বদল করে রোজগার করে আসছে। এজন্য কৃষি শ্রমিক দিনদিন সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বক্সিগঞ্জ এই ৭টি উপজেলায় একই সাথে ধান কাটার ধূম পড়েছে। বসে নেই কৃষাণী গৃহবধূরা। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে বধূরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। খাবার তৈরি করে খাবার পরিবেশনের পর ধান খড় শুকানো, ধান বাতাসে উড়ানো,পরিস্কার পরিচ্ছন করে ঘরে তোলছেন গভীর রাত পর্যন্ত। ইসলামপুরের পচাবহলা গ্রামের বাবলু জানান, ত্রিশ বিঘা জমি পাঁকা ধান মাঠে পড়ে রয়েছে শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছি না। মেলান্দহ উপজেলার সদারবাড়ি গ্রামের চা-স্টল শ্রমিক শাজাহান,রিক্সা চালক আল-আমিন জানায়, পূর্বে তারা মাঠে কৃষি কাজ করত। কিন্তু কৃষি কাজ বেশি দিন না চলার কারণে চা ষ্টলে কিংবা রিক্সা চালিয়ে সারা বৎসর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাই এখন আর সারাদিন ব্যাপি প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে ধান কাঁটা ইচ্ছে করেনা। কিন্তু এখন জমিতে পাঁকা ধান কাটতে দেখে তাদের খুশিতে মন নেচে উঠে। এবার ইরি-বোরো বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সূত্রে জানাগেছে,এ জেলায় ইরিবোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১লক্ষ ২৫হাজার ৫শ হক্টর জমি। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে প্রায় ১লক্ষ ৩০ হাজার ৯শ ৬০হেক্টর জমি। প্রতি হেক্টর জমির ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫.৫০মেট্রিক টন। বর্তমানে অর্জিত লক্ষ্যমাত্রায় ছাড়িয়ে প্রতি হেক্টরে ফলন হচ্ছে ৬.২৫ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন,চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটে কৃষকরা সঠিক সময়ে ধান কেটে ঘরে তোলতে পারে তাহলে এ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা।