নতুন বোরো ধান ঘরে তোলার আনন্দে যখন কৃষক-কৃষাণীর দুচোখে আনন্দে ভরপুর থাকার কথা সে সময়ে চরম বিষন্নতা আর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে কৃষক ও চাষীদের ঘরে ঘরে। আগামি দিনগুলি কিভাবে পাড়ি দিয়ে তাঁরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবেন সে চিন্তাই এখন কৃষকের ঘরে ঘরে। চলতি বোরো ধান কাটার মৌসুমে চরম শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের মাত্রাতিরিক্ত মজুরী, বাজারে ধানের দামের নি¤œমুখীতা ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূণী ঝড় ফণীর কারণে মাঠের ধান নুইয়ে পড়ে ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
সরেজমিনে পতœীতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা চরম শ্রমিক সংকটে ভুগছেন। রমজান মাসে ধান কাঁটা পড়ায় প্রতি বছরের মতো চলতি বছরে এলাকায় বাহির হতে শ্রমিক কম এসেছে। মাঠের সকল ধান একই সাথে কাটার উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা শ্রমিক নিয়োগে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে স্থানীয় শ্রমিকরা। শ্রমিক ঘাটতির সুযোগ নিয়ে তাঁরা বাড়িয়ে দিয়েছে মজুরী। গত বছর চুক্তি ভিত্তিতে বোরো ধান কাটার জন্য যেখানে শ্রমিকরা মণপ্রতি ৬-৭কেজি ধান পেত এ বছর তাঁরা মণপ্রতি ১৫-১৮কেজি পর্যন্ত ধান প্রদানে বাধ্য করছে কৃষকদের। এদিকে বোঙ্গা (ধান মাড়াই মেশিন) দিয়ে ধান মাড়াই করার জন্য কৃষকদের মণপ্রতি আরো কেজি ধান গুনতে হচ্ছে। যে সকল কৃষক জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তাদের জমির মালিককে দিতে হতে বিঘাপ্রতি ৭মণ ধান। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণী ঝড় ফণীর প্রভাবে মাঠের ধান নুইয়ে পড়ায় কৃষকরা আশানুরূপ ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে মোটের উপর চলতি মৌসুমে বোরো ধান নিয়ে লোকসানের মধ্যে রয়েছে কৃষকরা। যা তাদের পরিবারকে ফেলে দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এ বিষয়ে দোচাই গ্রামের কৃষক বিপ্লব জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে সব্বোর্চ ধান হয়েছে ২৪ থেকে ২৬মণ। ধান কাটার জন্য প্রতি মণের বিপরীতে শ্রমিকরা নিচ্ছেন ১২-১৫ কেজি ধান। জমির মালিককে দিতে হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৭মণ ধান ও বোঙ্গা মালিককে দিতে হচ্ছে মণপ্রতি কেজি ধান। সব দেনা মিটিয়ে বর্গাচাষীদের হাতে থাকছে ৩-৬মণ ধান। বাজারে ভালো মানের ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি সব্বোর্চ ৬শত৫০ টাকা দরে। মোটা ধান বিক্রয় হচ্ছে মণপ্রতি ৫শত টাকায়। একবিঘা জমিতে বেরো চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৫হাজার টাকা। এই অবস্থায় তিনি কি করবেন সে নিয়ে চরম সংশয় প্রকাশ করেন। আগামীতে তিনি ধান চাষ আর করবেন কিনা সে নিয়েও সংশয়ের কথা জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র এর সাথে কথা বললে তিনি শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ঘূর্ণী ঝড় ফণীর প্রভাবে ধানের উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে বর্তমানে বাজারে ধানের দামে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, এতে কৃষকরা ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে। চলতি মৌসুমে পতœীতলায় ২০হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে ৮১হাজার ৭শত ১০ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন এই লক্ষ্যমাত্রা পুরণে আমরা আশাবাদী।