গুটি কয়েক ফসলের বদলে ফল চাষ করা কৃষকদের মধ্যে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সুরত আলী একজন। আম, লিচু, পেয়ারা, খেজুর, ড্রাগন, নারকেলসহ নানা ফলের গাছ নিয়ে গড়ে তুলেছেন বাগান। আবহাওয়া ও মাটির কারণে বিদেশি ফল ফলতে দেরি হওয়ায় প্রথমে লোকসানের আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। দেরিতে হলেও গাছে ফল আসতে শুরু করায় লাভের আশা করছেন ফল চাষি সুরত আলী। এরইমধ্যে চারা বিক্রি করে আয় শুরু হয়েছে। ফল বিক্রি করে এ বছরেই লগ্নি করা টাকা উঠে আসবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
কালীগঞ্জের শিবনগর দাস পাড়ার এ ফার্মে ড্রাগন, আম, লিচু, পেয়ারা, খেজুর, লটকন, নারিকেল, রামবোটান প্রভৃতি ফলের বিভিন্ন জাতের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫ প্রকারের ড্রাগন, আমরুপালি, হিমসাগর, ল্যাংরা আমের গাছ, মোজাফর লিচু, ভারত থেকে আনা খোরমা খেজুর, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন প্রকার ও পেয়ারা ও নারিকেল গাছ।বিদেশি নারকেল গাছ সুরত আলী জানান, প্রায় ১২ একর জমিতে বিদেশি বিভিন্ন ফলের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩ একর জমি নিজের এবং বাকি জমি লিজ নেওয়া। বিঘা (৩৩শতাংশ) প্রতি বছরে ১০ হাজার টাকা করে ৯ একর জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে এ কৃষি ফার্মটি গড়ে তুলেছেন।তিনি জানান, দেশি ফসল চাষে খরচ কম এবং স্বল্প সময়ে খরচের টাকা উঠে লাভের মুখ দেখা যায়। কিন্তু বিদেশি ফল চাষে সময় লাগে বেশি এবং খরচ হয় বেশি। গাছে ফল আসতে শুরু করায় এখন তিনি আশাবাদী। ভিন্ন ধরনের এ জাতীয় ফসলের চাষ শুরু করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারই ভাগ্নে কৃষিবিদ ড.রুস্তম আলী।
খোরমার গাছ২০১৬ সালের শেষের দিকে নিজের বাড়ির পতিত জমি, শিবনগর ভাঁটা সংলগ্ন মাঠ ও দাস পাড়ার মাঠের ৪ একর জমিতে পেয়ারা, ৫ একর জমিতে ড্রাগন, দেড় একর জমিতে আম, প্রায় ২ বিঘা জমিতে লিচু এবং বাকি জমিতে রামবোটান, লটকন, খেজুর, নারিকেল ও কলার চাষ করেন। এ ফল চাষে তার প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফার্মে এখন প্রতিদিন ৭/৮ জন শ্রমিক প্রতিনিয়িত কাজ করে।ড্রাগন চাষ নিয়ে তিনি জানান, দেড় বছর বয়সে তার লাগানো গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। জুলাই-আগস্টের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে। সাধরণত ফুল আসার ৪০-৪৫দিনের মাথায় ফল পেকে যায়। একটি পরিপুষ্ট পাকা ফলের ওজন প্রায় ৩০০-৪০০ গ্রাম হয়। বছরে প্রায় ৩-৪ মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগন গাছ একবার লাগালে ওই গাছ থেকে কমপক্ষে ১০ বছর ফল পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে ড্রাগন কেজি প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। ঢাকার বাজারে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে। সুরত আলী আরও জানান, ড্রাগন চাষ করে এরইমধ্যে উপজেলার বোরহান ও স্বপন নামের দুইজন চাষি ভালো মুনাফা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন চাষী ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ১২ একর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যারটিন (ভিটামিন এ) ও আয়রন আছে।
তিনি জানান, কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস ড্রাগন চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে এবং নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে শীতের সময়ও এ ফল পাওয়া সম্ভব। আগামি বছর উপজেলার ড্রাগন চাষিদের মাঝে প্রযুক্তিরর প্রশিক্ষন দিয়ে অফ সিজেনেও এ ফল পাওয়া যাবে। লাভজনক এ ফল চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হলে কৃষি অফিস তাদেরকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।