সহজ শর্তে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে জনগণের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়ে চার প্রতারক উধাও হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই কা- ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। এ উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের শীতলাই গ্রামে ‘জনকল্যাণ সংস্থা’ নামে ওই চার প্রতারকের খোলা প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছেন এখানে অর্থ লগ্নিকারীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, সম্প্রতি দুই ব্যক্তি এলাকায় নিজেদের ‘জনকল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। এই পরিচয়ে তারা শীতলাই গ্রামের সাইদুর রহমানের বাড়ি ভাড়া নেন। কথা ছিলো তারা সাইদুরকে পাঁচ লাখ টাকা জামানত এবং মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেবেন। এ নিয়ে একটি চুক্তিও করেন প্রতারকরা। যে টাকা গত রোববার সাইদুরকে পরিশোধ করার কথা ছিলো। এছাড়াও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায়কৃত জামানতের বিপরীতে গত রোববারই কথা ছিলো ঋণ দেয়ার। কিন্তু রাতারাতি লাপাত্তা হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ওই চার কর্মকর্তা।
গ্রাহকদের দেয়া তথ্য মতে, সহজ শর্তে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের চার কর্মকর্তা উপজেলার মাড়িয়া, গোয়ালকান্দি ও হামিরকুৎসা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন। এজন্য গ্রাহকের কাছে প্রতি লাখের জন্য ১০ হাজার ২শ’ টাকা করে জামানত দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করানো হয়। রোববার ঋণ দেয়ার সময় জামানতের টাকাও ফেরত পাবেন।
আর এই ফাঁদে পড়েন এলাকার অন্তত দুই শতাধিক গ্রাহক। তাদের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ‘জনকল্যাণ সংস্থা’ নামে সংস্থাটির সেই চার প্রতারক।
প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের ভাষ্য, গত রোববার সকালে ঋণ নেয়ার জন্য তারা সংস্থার অফিসে গিয়ে দেখতে পান তালা ঝোলানো। অর্থ আদায়কারী চার ব্যক্তির হদিস নেই। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতারিত লোকজন ভীড় করেন।
ওই বাড়ির মালিক সাইদুর রহমান বলেন, কখন ভাড়াটিয়ারা চলে গেছেন তিনি টেরও পাননি। তারা এমন প্রতারক কোনভাবেই বুঝতে পারেননি।
ঋণ পাবার আশায় জামানত প্রদানকৃত উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আসলেই কোন কিছু না ভেবে লোভে পড়েই আমার মত সকলেই প্রতারিত হয়েছেন। বেশী টাকা লোন পাবার আশায় অনেকেই একই পরিবারের একাধিক সদস্যদের নামে জামানত দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।
মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল আজিজ জানান, ‘বাড়ির মালিক তাকে সংস্থার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। সংস্থার সাথে রোববার মালিকের যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিলো সেখানে তার হাজির থাকার কথাও ছিলো। কিন্তু তার আগেই তো উধাও হয়ে গেছে।’
এই বিষয়ে কথিত জনকল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তাদের দেওয়া পাঁচটি মুঠোফোন নম্বরই বন্ধ রয়েছে।
এই বিষয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় ‘জনকল্যাণ সংস্থা’ নামে কোনো এনজিও বা প্রতিষ্ঠান বাগমারায় কাজ করার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের জানা নেই। এলাকায় কাজ করার জন্য প্রাথমিকভাবে অনুমতির লক্ষ্যে ‘জনকল্যাণ সংস্থা’ নামে কেউ কোনো কাগজপত্র উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে জমা দেন নাই। আর প্রতারিত হওয়া ব্যক্তি ও সংস্থাটির কাজ করার বিষয়ে কেউ জানায়ও নি। বিষয়টি যেহেতু জানলাম খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’