ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিশিষ্ট কবি, লেখক, সাংবাদিক, ব্লগার, সংস্কৃতিসেবী এবং জীবনানন্দ গবেষক হেনরী স্বপনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা।
মঙ্গলবার রাত নয়টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালীন অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি পুলক চ্যাটার্জী। মানববন্ধন ও সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন খন্দকার, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, উন্নয়ন সংগঠক রহিমা সুলতানা কাজল, শুভঙ্কর চক্রবর্তী, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস প্রমুখ।
বক্তারা কবি হেনরী স্বপনকে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকেই (হেনরি স্বপন) গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। সমাবেশে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা বুধবার বিকেলে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের আহবান করা মতবিনিময় সভা বর্জনের ঘোষণা করা হয়। মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে একই দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় কবি ও ব্লগার হেনরী স্বপনকে নগরীর চৌমাথা এলাকার খ্রিষ্টান কলোনির গোলপুকুরস্থ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ। পরে তাকে থানায় না এনে সরাসরি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণের পর বিচারক শামীম আহমেদ তাকে (হেনরী স্বপন) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার এসআই ফিরোজ আল মামুন জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হেনরী স্বপনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত সোমবার দুপুরে মামলা দায়ের করেন বরিশাল ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লেকা বেলিয়েল গোমেজ। মামলার অপর দুই আসামি হলেন-নগরীর সার্কুলার রোডের খ্রিষ্টান সস্প্রদায়ের আলফ্রেড সরকার এবং তার ভাই জুয়েল সরকার।
এজাহারের বরাত দিয়ে এসআই ফিরোজ আল মামুন আরও জানান, ২০১৭ সালের ১৯ মে এবং একই বছরের ৩ জুলাই ফেসবুকে পৃথক পৃথক মন্তব্যে হেনরী স্বপন ক্যাথলিক চার্চের ফাদার, ব্রাদার এবং বিশপদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে তাদের সম্মানহানি করেছেন। এছাড়াও বরিশাল থেকে প্রকাশিত একাধিক সংবাদপত্রে হেনরী স্বপন চার্চের বিরুদ্ধে মানহানিকর লেখা লিখেছেন। এতে ক্ষুদ্ধ বরিশাল ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লেকা বেলিয়েল গোমেজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮, ২৯ এবং ৩১ ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন (মামলা নং-৪৮)।
উল্লেখ্য, ইস্টার সান-ডে’র দিন শ্রীলঙ্কার গির্জায় বোমা হামলা ও প্রার্থনারত বহু মানুষের মৃত্যুতে মর্মাহত ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হেনরি স্বপন। ওইসময়ে বরিশাল ক্যাথলিক চার্চে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হওয়ায় তিনি স্থানীয় সংবাদপত্রে ও ফেসবুকে বরিশাল চার্চের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনামূলক লেখা ও মন্তব্য প্রকাশ করায় চার্চ কর্তৃপক্ষ তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে হেনরি স্বপনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা।