চলতি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পরও দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীরা স্থানীয় বাজারের দোকানদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার খুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৪ মে মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সোহাগপুর বাজারে। এ নিয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মাঝে দুই দিনব্যাপী ব্যাপক উত্তেজনার পর উর্ধ্বতণ মহলের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের সোহারপুর বাজারে গত ১৩ মে সোমবার সকালে কাপাসিয়া পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা হানা দেয়। প্রথমে লাইনম্যান বোরহান ও ইলেক্ট্রিশিয়ান আল-আমীনের নেতৃত্বে বাজারের গ্রাহকদের নিকট ঢালাও ভাবে টাকা দাবী করে। এক পর্যায়ে গ্রাহক গোলাম মোস্তফা, বাদশা মিয়া ও শ্রী স্বপন কুমার দাসের চলতি মাসের পরিশোধিত বিলের কাগজ দেখানোর পরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাদের প্রত্যেকের নিকট ২ হাজার টাকা করে দাবী করে। বিষয়টি নিয়ে তখন ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন, বড়বেড় গ্রামের তোফায়েল আহমেদ মৃধা ও মোছলেম উদ্দিন মৃধা প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্থানীয় পরিচালক মোহর আলীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ইতোমধ্যে বাজার ব্যবসায়ী ও এলাকার লোকজন পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীদের ঘেরাও করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তারা পালিয়ে যায়।
এ খবর কাপাসিয়া পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসে পৌঁছলে ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার আবু মোঃ ইয়াহিয়া আকন্দ ক্ষুব্দ হয় এবং ১৪ মে মঙ্গলবার দুপুরে থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই বাজারে পুনরায় হানা দেয়। তারা গ্রাহকদের এলোপাথারী মারধর করে পুরো বাজারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং গ্রাহক নরসুন্দর স্বপন কুমার দাসকে পুলিশ আটক করে। তারা গ্রাহক স্বপন কুমার দাস, বাদশা মিয়া, গোলাম মোস্তফা, প্রতিবাদকারী তোফায়েল আহমেদ মৃধা ও মোছলেম উদ্দিন মৃধাসহ বেশ কিছু মিটার খোলে নিয়ে আসে। মুহুর্তের মাঝে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সড়কে বেড়িকেড দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের অমানবিক আচরনের বিচার দাবী করে। তারা সন্ধ্যার পূর্বেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আলটিমেটাম দেয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, কাপাসিয়া থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আবু মোঃ ইয়াহিয়া আকন্দ ও আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন। উপস্থিত সবাই ঘটনার বিস্তারিত শুনে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
পরিশোধিত বিলের কপি দেখানোর পরও বকেয়া বিল রয়েছে বলে দাবী করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বকেয়া বিলের গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার শর্তে তাদের নিকট থেকে মাসোহারা নেয়া, নতুন সংযোগের নামে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও গ্রাহকদের সাথে যখন তখন দূর্ব্যবহার করা সহ নানা অভিযোগ প্রমান হয়। ফলে সন্ধ্যার পূর্বেই বিচ্ছিন্ন গ্রাহকদের পুনরায় মিটার ও সংযোগ ফিরিয়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, পল্লী বিদ্যুতের দালাল নির্ভর সীমাহীন দূর্নীতি, নতুন সংযোগের নামে অতিরিক্ত টাকা দাবী করে দিনের পর দিন হয়রানী, রাস্তার পাশের সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকার গাছ কাটার পরও ঘন ঘন লোডসেডিংয়ে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রোজার মাসে বিনা কারণে যখন তখন বিদ্যুৎ বন্ধ করা নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।