দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি সাদা সোনা নামে খ্যাত বাগদা চিংড়ি চাষ হুমকির মুখে। গত কয়েক বছর অব্যাহত দাম হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদন খরচ না উঠায় চিংড়ি চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থসহ চরম হতাশায় ভুগছেন। ধ্বস ঠেকাতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এ রপ্তানি খাতটি বন্ধের উপক্রম হবে বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় ৮০’র দশক থেকে ধান চাষের পাশাপাশি লবণ পানির সাদা সোনা বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু হয়। চিংড়ি চাষ থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছেন। তবে বাগদা চিংড়ির মারাত্মক দরপতনে চিংড়ি ব্যবসায় ধ্বস লেগেছে। কয়েক বছর আগেও চিংড়ির গ্রেড হিসেবে কেজি প্রতি ২০ গ্রেড ১২-১৪শ টাকা, ৩০ গ্রেড হাজার থেকে ১২শ টাকা, ৪০ গ্রেড ৬-৮শ টাকা, ৫০ গ্রেড ৫-৭শ টাকা, সর্বনি¤œ ছিল সাড়ে ৪ থেকে ৫শ টাকা দাম ছিলো। গত তিন বছর ধরে চিড়িতে পুশ করার অজুহাতে দাম একেবারে কমিয়ে আনা হয়েছে। সর্বোচ্চ বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৫-৭শ টাকা এবং সর্বনি¤œ ৩-৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক বিঘা জমির হারি সর্বনি¤œ ১২ হাজার টাকা। একজন শ্রমিকের মাসিক বেতন ৭-১০ হাজার টাকা। তাছাড়া দৈনিক মাথাপিছু দিনমজুর ৪শ টাকা। বাগদার পোনা প্রতি হাজার (নদী) ১৫শ, হ্যাচারী ৪শ টাকা। এ ছাড়া ভাইরাসে মাছ মরা এবং সার্বিক খরচ মিটিয়ে উৎপাদন খরচ ওঠানো একজন চাষীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
পাইকগাছা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট মৎস্য চাষির সংখ্যা ৪৮১৭ জন। ২০১৭-২০১৮ প্রতি বছর চিংড়ি উৎপাদান হয়েছে ৫৭২০.৫০ মেট্রিক টন মাছ, ৩৭২০.৮০ মেট্রিক টন, কাঁকড়া ৪১১০.৮০ মেট্রিক টন। উৎপাদন খরচ থেকে অব্যাহত বাজার বিক্রি মূল্য কম হওয়ায় সম্ভবনাময় একসময় লাভজনক এ শিল্পটি বন্ধের আশঙ্কা করছেন চিংড়ি চাষীরা।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস এফএনএসকে বলেন, কিছুকিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে চিংড়ি খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অপরদিক, ২২ মে থেকে জুলাই ২২ পর্যন্ত চিংড়ি প্রজণনকাল ধরায় এ সময় বাজারে কোনো পোনা না থাকায় ভরা চিংড়ি চাষ মৌসুমে চিংড়ি চাষীরা চরম বিপাকে থাকে। খুলনা জেলা চিংড়ি পোনা হ্যাচারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রিপন এফএনএসকে বলেন, প্রজন্ম কাল বাংলা কার্তিক থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট করা হলে চিংড়ি চাষীদের দুশ্চিন্তায় ভুগতে হতো না।