রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী চাটনাই খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নগরীর বাটার মোড়ের জিলাপি। সারাবছরই এখানকার জিলাপির চাহিদা ব্যাপক। আর রমজানে তা বেড়ে হয় কয়েক গুণ। রোজাদারদের কাছে ইফতার উৎসবের সন্ধ্যাকে আরও একটু আনন্দময় করতে এর যেন জুড়ি নেই। রাজশাহীর ভোগবিলাসী মানুষ ইফতারে চান বাটার মোড়ের এই জিলাপি। বিশেষ করে নগরীতে বসবাসকারীদের কাছে ইফতার আয়োজনে আজও সমান কদর আছে এ জিলাপির। যে কারণেই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন এখাকার কারিগররা। তবে প্রয়াত এই জিলাপির কারিগর কালী পদের মত এখন সুস্বাদু হয়না বলেও জানিয়েছেন একাধিক ক্রেতা।
সামান্য টক ও মচমচেভাবে তৈরিকৃত এই জিলাপির স্বাধ ইচ্ছে করলে দোকানে বসেই নিতে পারেন ক্রেতারা। আবার প্যাকেটে করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পরিবারের সাথে উপভোগ করতে বাটার মোড়ের এই জিলাপির স্বাদ একেবারেই অতুলনীয়। এখানে প্রতিদিন ১০০ কেজি জিলাপি বিক্রি হলেও রমজান মাসে এর চাহিদা প্রায় ২০০ কেজি। গত বছরের মত এবারো প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এখানকার জিলাপি।
জানা গেছে, এই সুনামখ্যাত মজাদার জিলাপি বিক্রি শুরু হয় ১৯৫৮ সালে। সে সময় ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন সম্পূর্ণ নিজস্ব রেসিপিতে এ জিলাপি বানানোর কাজ শুরু করেন। তবে এর কোনো নাম থাকলেও মূলত বাটার মোড়ের নাম করণেই পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে এর মালিক তমিজ উদ্দিনের দুই নাতি শামিম ও সোহেল।
এ বিষয়ে তারা বলেন, তিন পুরুষ ধরে চলা এই জিলাপির ব্যবসা এখন পর্যন্ত তারা সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন। এই সফলতার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রসংশা করে বলেন, ঐতিহ্যের প্রতি ভালবাসার টানে অব্যাহত সততাই ক্রেতাদের ভালবাসা পেতে আকৃষ্ট করেছে। তারা সব সময় চেষ্টা করেন মানুষের সামনে নির্ভেজাল জিলাপি পরিবেশন করতে। তারা বলেন, বর্তমানে প্রায় সব জায়গাতেই জিলাপি তৈরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে হাইড্রোজসহ নানারকম কেমিক্যাল, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কিন্তু তাদের তৈরী জিলাপিতে হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয় না দাবী করে শামিম বলেন, এটি সম্পূূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা তৈরী করা হয় বলেই ক্রেতারা তাদের জিলাপি ক্ষেতে ভালবাসে। তবে এ সুস্বাদু জিলাপি তৈরির জন্য একমাত্র দাবীদার প্রয়াত প্রধান কারিগর কালী পদ। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে এই জিলাপি তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন। বেশকিছুদিন আগে তিনি মারা গেছেন।
জিলাপির স্বাদের রহস্য জানতে চাইলে শামিম বলেন, নির্ভেজাল উপাদান ও নিজস্ব রেসিপিই আমাদের প্রকৃত স্বাদের রহস্য। জিলাপি তৈরির উপাদান জানতে চাইলে বলেন- এতে চালের আটা, ময়দা ও মাসকলাইয়ের আটা ব্যবহার করা হয়। এ উপাদানগুলো পানিতে বিভিন্ন পরিমাণে মিশিয়ে রাখা হয় ৬-৮ঘন্টা। আর এরপরই তৈরী করা হয় ঐতিহ্যবাহী বাটার মোড়ের জিলাপি। তবে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করা হয় পামওয়েল এবং ডালডা।