নিয়ম না মেনেই যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। মুদি দোকান,ব্যাটারি, হার্ডওয়্যার বা অ্যালুমোনিয়ামের দোকানেও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। আর যে দোকানগুলোতে শুধু বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস তারাও মানছেন না কোনো নিয়ম নীতি। ঝুঁকিপূর্ণ ওই গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানগুলোতে নেই অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা। আর বিস্ফোরক অধিদপ্তর, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নেয়া হয়নি কোনো অনুমোদনও। উপজেলা শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোতেও কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র খোলা হচ্ছে এলপি গ্যাসের দোকান। অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা না রেখে ঝুঁকিপূর্ণ এমন দোকান খোলায় উদ্বিগ্ন আশপাশের দোকান ও বাসা বাড়ির মালিকরা। এমন দৃশ্য উপজেলায় অধিকাংশ এলপি গ্যাসের দোকানে। বর্তমানে বাসা বাড়ি কিংবা হোটেল রেস্তরাঁয় প্রতিনিয়তই বাড়ছে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে শহর, শহরতলী ও গ্রাম এলাকায়ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান।
জানা যায়, খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই ১০টির বেশি সিলিন্ডার না রাখার বিধান থাকলেও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইসেন্সবিহীন এসব দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ওই জ্বালানি। আইনের তোয়াক্কা না করে ওই সকল দোকানিরা শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চালাচ্ছেন শহর ও গ্রাম এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা। বাসা, বাড়ি, দোকান ও সড়কের পাশের এসব দোকানে অনিরাপদে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ফলে আশঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরণ, অগ্নিকান্ড ও প্রাণহানির। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চালালেও তা বন্ধে নেই গৃহিত কোনো পদক্ষেপ। এলপিজি গ্যাস কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার মজুত আইন অনুসরণ করছে না।
চিরিরবন্দরের খুচরা এলপিজি গ্যাস বিক্রয়কারী অধিকাংশ দোকানগুলোতেই নেই প্রাথমিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ড্রাই পাউডার, বালু ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। শহরের সবগুলো খুচরা দোকানে দেখা যায় যেখানে থাকার কথা ৮-১০টি সিলিন্ডার সেখানে এসব দোকানে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির অসংখ্য সিলিন্ডার।
জানা যায়, বিস্ফোরক আইন ১৯৮৪ এর দ্যা এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুত করা যাবে না। এ ছাড়াও আটটি গ্যাসপূর্ণ মজুতের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১ নং ধারায় বলা হয়েছে আগুন নেভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুতগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুত রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে যেকোন ব্যবসায়ী ২ বছর ও অনধিক পাঁচ বছরের জেলসহ ৫০ হাজার টাকায় দন্ডিত হবেন। এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরো ৬ মাস কারাগারে থাকার বিধান রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান খুলতে প্রথমেই নিতে হয় বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। কিন্তু পুরো উপজেলায় তার উল্টো চিত্র। কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম মজুত না রেখেই এখানকার মুদি দোকান থেকে শুরু করে চা দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান এমনকি ফার্মেসির সঙ্গেও বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার, সড়কে ,সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কোনোরূপ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এলপি সিলিন্ডার গ্যাস। আর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরাও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই বাসা বাড়ি কিংবা হোটেলে ব্যবহার করছেন। দোকানগুলোতে দেখা যায় অমেরা, বসুন্ধরা, টোটাল, পদ্মা, যমুনা, লাফাজসহ বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির প্রস্তুতকৃত সিলিন্ডারের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে বিভিন্ন দোকানে দেখা যায় অনেক কোম্পানির সিলিন্ডারের গায়েই উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে চিরিরবন্দর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন মাষ্টার মোঃ সারোয়ার হোসাইন বলেন, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ও বিক্রি অতীব ঝুঁকিপুর্ন। কোন দোকানে বহনযোগ্য ফায়ার ষ্টিং নেই। কোনভাবে একটি সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হলে আশেপাশের সব সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হতে পারে। যা পানি দিয়ে নেভানো সম্ভব নয়। এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে মহড়া করা হচ্ছে।