বরেন্দ্রকন্যা নিয়ামতপুরে দিন দিন আমচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষীরা। ধারাবাহিক ভাবে ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানী জমিতেই আমের বাগান তৈরী করে লাভের মুখ দেখছেন জমির মালিকরা। তাই কৃষিজমি নষ্ট করেই নিয়ামতপুরের আটটি ইউনিয়নেই কম-বেশী গড়ে উঠছে আম বাগান। গত কয়েকবছর থেকে এসকল আম বাগানের আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানী হচ্ছে। বরেন্দ্র মাটি নিয়ামতপুরের আম সুমিষ্ট ও সুস্বাদু হওয়ায় এর সুনাম ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। আর এ সুনামকে অক্ষুন্ন রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চলছে কড়া নজরদারী।
নিয়ামতপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কৃষি (আবাদী) জমি। বর্তমানে এ কৃষি জমি ব্যবহার করেই উপজেলার বিভিন্ন জায়গার ৯৬০ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে আম বাগান। এসকল বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের আম। এদের মধ্যে ফজলি, ন্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ও হিমসাগর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরো শতাধীক হেক্টর জমিতে রয়েছে আ¤্রপালি জাতের বাগান।
সরেজমিনে বুধবার উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের সামসুল হক, চন্দননগরের আব্দুর রাজ্জাক, হাজ্বীনগরের আব্দুল আলীম ও আব্দুর রহীমের বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ বাগান জুড়ে গাছে ঝুলে রয়েছে বিভিন্ন জাতের আম। চলতি মাসে কয়েকবার বৃষ্টি হওয়াতে আমের জন্য বেশ ভাল হয়েছে।
আম বাগানের মালিক সামসুল হক জানান, তিনি তার আবাদী জমির ৩৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। বাগান থেকে প্রতিবছর আম পাচ্ছেন পাশাপাশি ধানেরও চাষ হচ্ছে জমিতে। সমন্বিত ধান-আম চাষে তিনি লাভের মুখ দেখছেন। তিনি জানান, নিয়ামতপুরের মাটি রুক্ষ হওয়া আমের সাইজ ছোট হলেও খেতে খুব মিষ্টি তাই এ আমের চাহিদা বাইরে অনেক বেশী।
হাজ্বিনগর ইউনিয়নের বাগান মালিক আব্দুল আলীম। তিনি তার ৭৮ বিঘা জমিতে আমের বাগান গড়েছেন। তিনি জানান, নিয়ামতপুরের আমের কদর বাড়ছে দিন দিন। কারন নিয়ামতপুরের বাগান মালিকরা আম পাকাতে কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করেননা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমীর আব্দুল্লাহ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নিয়ামতপুরে আম বাগানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও নিয়ামতপুরের মাটির কারনে এখানকার আম খেতেও খুব সুস্বাদু। তার অফিসের পক্ষ থেকে আমের মুকুলের পূর্ব থেকেই বাগান মালিকদের প্রয়োজনীয় করনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে জানান তিনি।
ইউএনও জয়া মারীয়া পেরেরা জানান, “তিনি বুধবার কৃষি অফিসারকে সাথে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি আমচাষী ও সংশ্লীষ্টদের নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম নিশ্চিত করনে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করেছেন। এছাড়াও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ব্যতীত কীটনাশক বা রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ ও নির্ধারিত সময়ের পূর্বে আম গাছ থেকে না নামানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এর ব্যতয় ঘটলে কঠিন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন।”