তৃতীয় দফায় গতকাল শনিবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সর্ব তাপমাত্রা ছিল ২৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতেই এমন আগুনঝরা রোদে তেঁতে উঠেছে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চল। আবহাওয়াবিদদের ভাষ্যমতে এ তাপদাহে প্রাণীকুল বিপর্যস্ত হলেও ফল পাকানোর লক্ষ্যেই এই তাপমাত্রার সৃষ্টি। আর এই তাপমাত্রায় যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যাহত লোডশেডিং। তবে এটিকে লোডশেডিং না বলে বলা যেতে পারে বিদ্যুৎ যায়না, মাঝে মধ্যে আসে। যে কারণে সবমিলিয়ে একেবারেই নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের প্রাণীকুল।
সূর্যের পোড়া দহনে শুধু রাজশাহী মহানগরবাসীরই নয়, প্রাণ যায় যায় অবস্থায় বিপর্যস্ত উত্তরাঞ্চলবাসী। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। বৈশাখের পর ধারাবাহিকভাবে বয়ে যাওয়া জৈষ্ঠ্যের এমন খরতাপে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। যেন কাটছেই না। আগুনঝরা আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। দিনে লু হাওয়া, রাতে গুমট গরমে নাভিশ্বাস উঠছে সবার। বৃষ্টির জন্য মানুষের মধ্যে যেনো হাহাকার পড়ে গেছে। সূর্য দহনে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে চর্ম রোগির সংখ্যাও। এর মধ্যে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তীব্র রোদে পুড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি। প্রাণ হারাচ্ছে অনেক গাছ গাছালি।
দিনভর সূর্যের তীর্যক রশ্মী আর গরম হাওয়া, দুপুর থেকে শুরু হয় গরমের নাভিশ্বাস। আর দিনে রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে স্বস্তির জায়গা খুজে পাওয়া দুস্কর। তবে গত শুক্রবার বিকেলে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বৃষ্টিপাত ও শীলায় ক্ষতির পরিমান অনেক হলেও কয়েক ঘন্টার জন্য তাপদাহের কবল থেকে স্বস্তিতে ছিল মানুষ। এরপর শনিবার সূর্যদয়ের সাথে সাথেই তার তীর্যকতার রুপ নেয় ভয়াবহ আকারে। একইসাথে ভ্যাপসা গরমে নাস্তানাবুদ রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এ তাপমাত্রা ক্রমন্বয়ে আরো বাড়বে বলে শনিবার রাতে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানিয়েছেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৩য় দফায় শনিবার বিকাল ৪টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনি¤œ ছিল ২৩.১। এদিন সকালে বাতাসের আদ্রতা ৯৪ শতাংশ ও বিকাল ৪টায় ৫৯ শতাংশ। আগের দিন শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.৫ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ২৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের এই পর্যবেক্ষক আরো বলেন, সামান্য বিরতি দিয়ে রাজশাহীর তাপমাত্রা আবারও বাড়ছে। দিন যতই যাচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। আরো কয়েকদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২য় দফায় গত ৯ ও ১০ মে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, সারাদিন তাপদাহে খাঁ খাঁ করছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল। মানুষের পাশাপাশি কাহিল পশু-পাখিরাও। মাঠ-ঘাট, বাসা কিংবা অফিস-আদালত কোথাও নেই স্বস্তি। অব্যাহত লোডশেডিং ও তাপমাত্রার কারণে রাজশাহীসহ উত্তারাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অব্যাহত এ তাপদাহের কারণে ইফতার আয়োজনে শরবত, ডাব, তরমুজ, বেলসহ রসালো ফলের চাহিদা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী ও কিছুটা সহনীয় মাত্রায় দাম থাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে আখের রস।
অন্যদিকে, সূর্যের তাপে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। অব্যাহত তাপপ্রবাহে রাজশাহীর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা চরমে পৌঁছেছে। আর অসহনীয় গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকোপ বেড়েছে বিভিন্ন রোগের। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সূত্র মতে, ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হয়। এরমধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত কয়েকদিন থেকে অব্যাহত তাপপ্রবাহে এতবছর পর আবারও সে রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সবাই।