দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় দিনে দুপুরে এক ব্যবসায়ীর উপর হামলা চালিয়ে অর্ধলাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর বাজার সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরীর সামনে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী দুপুরে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ব্যবসায়ী আউয়াল খাঁন জানান, গত ১ মে শিকারপুর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাচ্চু বেপারী ও তার সহযোগীরা তার নির্মানাধীণ দোকানে গিয়ে তার (আউয়াল) কাছে চাঁদা দাবী করে। তিনি দিতে অপরাগত জানালে ওই সন্ত্রাসীদের সাথে তার (আউয়াল) বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ব্যবসায়ী আউয়াল তার ছেলেকে নিয়ে বই-খাতা ক্রয় করতে বাজারের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরীর সামনে গেলে সন্ত্রাসী বাচ্চু বেপারী তার সহোদর মিঠু, লিটন ও জুয়েলসহ ৭/৮ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী আউয়ালের কাছে থাকা অর্ধ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী শাকিল মাহমুদ আউয়াল বাদী হয়ে সন্ত্রাসী বাচ্চু বেপারীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল জানান, ভুক্তভোগির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনার পরে হামলাকারী বাচ্চু বেপারী ও তার সহযোগীদের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বেড়িয়ে আসছে। স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালেও এই বাচ্চু শিকারপুর বন্দর সংলগ্ন মাছ বাজারে পলিথিন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর ২০০৩ সালে দোয়ারিকা ও শিকারপুর সেতু উদ্বোধন হলে শিকারপুর বন্দরের ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে বাচ্চু ভাঙ্গারির ব্যবসা শুরু করেন। সেই থেকেই স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পান ‘ভাঙ্গারি বাচ্চু’ হিসেবে। তৎকালীন সময়ে বাচ্চু তার ভাঙ্গারী দোকানের আড়ালে ফেন্সিডিলের ব্যবসা চালাতেন। সেই সময় বরিশাল র্যাব-৮ এর সদস্যরা বাচ্চুর ওই ভাঙ্গারির দোকান থেকে বেশ কয়েক বোতল ফেন্সিডিলও উদ্ধার করেছিলেন। শিকারপুর এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বাচ্চু এলাকার বিভিন্নস্থানে ছিচকে চুরি করে কয়েকবার ধরা পড়ে গণপিটুনি খেয়েছে। তাছাড়া ফেরীঘাট থাকাকালীন সময়ে সে শিকারপুরে একটি চোরচক্র নিয়ন্ত্রন করতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিকারপুর এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মাধ্যমিকের গন্ডি পারায়নি বাচ্চু। শুধু মাত্র নিজের নাম লিখতে পারা ভাঙ্গারি বাচ্চু একের পর এক অপকর্ম আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে চলছে। একাধিকবার চাঁদাবাজি ও নারীর সাথে অবৈধ মেলামেশা করতে গিয়ে জনতার হাতে গণপিটুনির শিকারও হয়েছেন তিনি। আর বাচ্চুর এসব অপকর্মের নিত্যসঙ্গী মাদক বিক্রেতা ভাই মিঠু ও লিটন। এতদিন তিন ভাইয়ের বেপরোয়া কর্মকা-ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সম্প্রতি গত ১০ মে রাতে উপজেলার শিকারপুর বাজারস্থ শম্পা ষ্টুডিও দোকান ঘরের মধ্যে বসে থাকা এক কলেজ ছাত্রীকে ভাঙ্গারি বাচ্চু ও তার দুই ভাইসহ ১০ থেকে ১২ জনে মিলে শ্লীলতাহানি ঘটায়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে বাচ্চুসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করে গত ১১ মে উজিরপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে ওই কলেজ ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, বাচ্চু নিজেকে সাংবাদিক তথা আইনের লোক দাবী করে ওই কলেজ ছাত্রীর পড়নের ওড়না নিয়ে যায় এবং তার শরীরের কাপড় টানা হেচড়া করে। এর প্রতিবাদ করলে ভাঙ্গারি বাচ্চু ওই কলেজ ছাত্রীকে ষ্টুডিও দোকান ঘরের ভিতরের একটি কক্ষে নিয়ে তাকে নগ্ন করে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হাত দেয়। এমনকি নগ্ন অবস্থায় বাচ্চু তার মোবাইল ফোন দিয়ে ওই ছাত্রীর বেশ কিছু অশ্লীল ছবি তোলে। এক পর্যায়ে ওই কলেজ ছাত্রীর ডাক-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে বাচ্চুসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। ভুক্তভোগী ওই কলেজ ছাত্রী জানান, বাচ্চু নিজেকে আইনের লোক দাবী করে আমার সাথে যে ধরনের কাজ করেছে আমি তার সঠিক বিচার চাই। ওই লম্পটের শাস্তির জন্য আমি উজিরপুর মডেল থানার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগটি এসআই সালেহ গ্রহণ করেছেন। কিন্ত রহস্যজনক কারনে বাচ্চু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।’শিকারপুর বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এক সময় বাচ্চু বাজারে টোকাইয়ের কাজ করতেন। নিজের নাম পর্যন্ত ঠিকভাবে বাচ্চু লিখতে পারেনা, নেই তার কোনো শিক্ষাগত সনদপত্র। ইচলাদি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত কয়েক মাস আগেও এই ভাঙ্গারি বাচ্চু ইচলাদি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে গভীর রাতে অবৈধ মেলামেশা করতে গিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পরে। এক পর্যায়ে সেখানে স্থানীয়দের হাতে মারধরের শিকার হয়ে নিজের মোটর সাইকেল রেখে পালিয়ে আসে। এর আগে ভাঙ্গারি বাচ্চু ও তার মাদক বিক্রেতা দুই ভাই শিকারপুর বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে তাদের সাথে থাকা অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছিলো। সেই মামলা এখনও চলমান। তবে বাচ্চু আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকবার নারী সংক্রান্ত ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে বাচ্চুকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলো পুলিশ। শিকারপুর বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক শফিকুল আলম করিম খান জানিয়েছেন, ‘এদের মতো ভাঙ্গারি বাচ্চুর কারনে আজ সাধারন মানুষ হুমকির মুখে। সন্ত্রাসী বাচ্চুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় কমপক্ষে দশটি মামলা রয়েছে। তাই অচিরেই এসব ভাঙ্গারি বাচ্চুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’