চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। অথচ ঘটনার হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার চোরাচালানিরা রুটও পরিবর্তন করে ফেলেছে। স্বর্ণ এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটে আসছে না। এখানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারত অথবা ব্যাংকক হয়েও স্বর্ণ আসছে। গত রোববার বিকালে ব্যাংকক থেকে আসা একটি ফ্লাইটের যাত্রীর কাছ থেকে অন্তত চার কোটি টাকার স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ আসছে দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফ্লাইটে এসব স্বর্ণের চালান আসার ঘটনা ধরা পড়েছে। বিভিন্ন সময় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণের চালান যাচ্ছে। এসব ফ্লাইটে পরিত্যক্ত অবস্থায়ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া গেছে।
একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গত বছর দেড়েকের মধ্যে প্রায় একশ’ কোটি টাকার স্বর্ণ আটকের ঘটনা ঘটেছে। অনেকদিন ধরেই দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ কিংবা সৌদি আরব থেকেও আনা হচ্ছে স্বর্ণ। এসকল চোরাচালানের সাথে জড়িত চুনোপুটিরা ধরা পড়ে। তবে রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইওে থেকেই যাচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে দিনের পর দিন স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। কিন্তু এসবের সাথে কারা জড়িত, এত স্বর্ণ কোত্থেকে কেন আনা হচ্ছে, এগুলো যাচ্ছে কোথায়, এসব প্রশ্নের কোন কুল কিনারা করা সম্ভব হচ্ছেনা। সংযুক্ত আরব আমীরাত থেকে আসা যাত্রীদের বিষয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা আছে। আবার কঠোর নজরদারিতে আছে ফ্লাইট এবং যাত্রীরা। এতে একের পর এক চালান ধরা পড়ছে। এজন্য চোরাচালানিরা রুট পরিবর্তন করে চট্টগ্রামে স্বর্ণ আনছে। এভাবে রোববার ব্যাংকক থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারের একটি ফ্লাইটের এক যাত্রীর কাছ থেকে অন্তত সাড়ে এগার কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এরপরেই ওই রুট নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু হয়। শাহ আমানত বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মোহাম্মদ শাহজাহান নামের ওই যাত্রীর ব্লেজারের ভিতরে ৯৬টি স্বর্ণের বার লুকানো ছিল। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তল্লাশী করলে উক্ত স্বর্ণ পাওয়া যায়। আটককৃত স্বর্ণের মূল্য ৪ কোটি টাকা। শাহজাহান একজন প্লাম্বার মিস্ত্রি। তার বাড়ি সাতকানিয়ায়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার নূর উদ্দিন মিলন জানায়, সংঘবদ্ধ চক্র উক্ত স্বর্ণের চালানটি শাহজাহানকে দিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। তার কাছে দুবাইয়ের রেসিডেন্ট কার্ডও আছে। মাস দেড়েক আগে তিনি দুবাই থেকে থাইল্যান্ড যান। এরপর ওখানে প্লাম্বারের কাজ করতে থাকেন। ব্যাংকক বিমান বন্দরে রিজেন্ট এয়ারের ফ্লাইটে উঠার আগে তাকে এক ব্যক্তি বারগুলো দিয়ে চট্টগ্রামে এক ব্যক্তিকে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামে ওই ব্যক্তি শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করার কথা ছিল। শাহজাহান চট্টগ্রামে নামার পর একটি রবি নম্বর থেকে তার সাথে যোগাযোগও করা হয়। তবে শাহজাহান ধরা পড়ার পর ওই ব্যক্তি ফোনটি বন্ধ করে দেয়। তার মোবাইল নম্বরটি পুলিশকে দেয়া হয়েছে। ওই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই চোরাচালানি চক্রের হোতারা ধরা পড়তে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। এর আগে আটক শাহজাহান গত ফেব্রুয়ারি মাসেও শাহ আমানত বিমানবন্দরে মোবাইল ফোন সেট, ক্রিম ও সিগারেটসহ ধরা পড়েছিল। বিদেশে থাকলেও প্রায়ই সে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করার প্রমাণ রয়েছে। বর্তমানে শাহজাহানকে পতেঙ্গা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এব্যাপারে একটি মামলাও করা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে জৈনিক ব্যক্তির ফোনের সূত্র ধরেই। বিমান বন্দরের যাত্রীরা জানিয়েছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িতরা অধরা থাকার কারণেই বার বার ওই বিমান বন্দর দিয়ে স্বর্ণ আসছে।