আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সেই ৫২টি ভেজাল পণ্য এখনো রাজশাহীর বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। নিষিদ্ধ এসব পণ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে অভিমত ক্রেতা-বিক্রেতাদের। শুধু তাই নয়, মানহীন এসব পণ্য বিক্রিতে আদালতের নির্দেশনার কথা জানেন না বলেও দাবি করেছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত পন্যগুলোর একাধিক মার্কেটিং আফিসার। অথচ গত ১৩ মে উচ্চআদালতের এক আদেশে এসব মানহীন পণ্য বাতিল ঘোষণা করে ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দাবি সর্বস্তরে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হলে এসব বিষয়ে আইন প্রয়োগের তেমন প্রয়োজনই পড়বে না। আদালতের নির্দেশনা মেনে সকলেই সুস্থ থাকবেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে রাজশাহী মহানগরীর উপশহর, ডিঙ্গাডোবা, লক্ষীপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন অভিমত। নগরীর বেশীরভাগই বিক্রেতাদের দাবি আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে তাদেরকে সরকারীভাবে বা বাতিলকৃত সেই ৫২ টি মানহীন পন্য কোম্পানীর পক্ষ থেকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। আর ক্রেতারা ক্রয় করছেন বলেই তারা সেসব পণ্য এখনো বিক্রি করছেন। তবে কিছু বিক্রেতা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আদালতের সেই নির্দেশনার বিষয়ে অবগত থাকার কথা স্বীকার করলেও তাদের কাছে কোন নির্দেশনা না আসায় এখনো সেসব পন্য বিক্রি করছেন। এ নির্দেশনা পালনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থাসহ প্রতিটি দোকানের প্রধান ফটকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সেই ৫২টি ভেজাল পণ্যের তালিকা টাঙানোর পরামর্শ দিয়েছেন অনেক ক্রেতা।
ক্রেতা-বিক্রেতারা বলেন, আদালত কতৃক বাতিল ঘোষণাকৃত ৫২ পণ্যগুলোর বিষয়ে বেশীরভাগই মানুষ জনেন না।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে নগরীর লক্ষীপুর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী এনামুল বলেন, ‘টিভি বা পেপার পড়ার সময় পায়না। তবে ৫২টি পণ্য বাতিলের কথা শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাইনি। যে কারণেই কাস্টমাররা চাইলে আমি তো বিক্রি করবোই। তবে নির্দেশনা আসলে সেসব পন্য বিক্রি সম্পূর্ন বন্ধ করে দিব।’
রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার এক ক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ভেজাল পন্যগুলো বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দিলেও আদালতের আদেশ পালন করছেন না কোন দোকানদাররা। ডিসপ্লেতে সেসব পন্য দেখে বাচ্চারা পূর্বের ন্যয় নেওয়ার জন্য বাইনা ধরছে, না কিনে দিলে কান্না থামাচ্ছেনা, এ মূহুর্তে আমরা অসহায়। যে কারণে ভেজাল পন্যগুলো দোকান থেকে অপসারণের জন্য আইন প্রয়োগকারী প্রশাসনের সকল সংস্থাকে একযোগে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস.এম. আবদুল কাদের ও জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক অপূর্ব অধিকারী মঙ্গলবার দুপুরে জানান, ‘প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের ঘাটতি থাকায় আদালতের নির্দেশনা তারা উপেক্ষা করে চলেছে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হলে এ বিষয়ে অন্তত অভিযানের প্রয়োজন পড়ত না। অথচ, এসব ভেজাল পন্য খেয়েই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও আদালতের নির্দেশনা তারা মানছেন না। যে কারণে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আইনপ্রয়োগ করে সহসায় এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়ে উঠবেনা।’