ভারতের লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত জরিপে শাসক দল বিজেপির জয়ের আভাস মিলেছে। এ খবরে উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির ‘নতুন সংসার’ গোছানো শুরু করেছে। আজ শরিকদের সঙ্গে বৈঠক ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আগামী ৫ বছরে সরকারের রূপরেখা কি হবে তা নির্ধারণে একই দিন বৈঠকে বসছেন মন্ত্রিসভার শীর্ষ সদস্যরাও। পক্ষান্তরে দিল্লি দখলে বড় হোঁচট খেল মহাজোট। ভেস্তে গেল কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর বহুল আকাক্সিক্ষত বৈঠক। বুথফেরত সমীক্ষা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে বিরোধীদের আরেকটি অংশ। সমীক্ষাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ও সমাজবাদী পার্টির (সপা) নেতা অখিলেশ যাদব। নডিটিভি জানায়, পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন দিয়ে সমীক্ষাকে ভুল দাবি করেছেন অখিলেশ। আর জয়ের আশা না ছেড়ে গত সোমবার বিকালে কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন চন্দ্রবাবু। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা বলছে, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এনডিএ জোট এবার তিন শতাধিক আসন ধরে রাখতে সক্ষম হবে। এ পরিস্থিতিতে শরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আরও জোর দিচ্ছেন মোদি-শাহরা। নিজেদের ঘর গোছাতে আজ নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে শরিকদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন অমিত শাহ। এনডিএ শরিকদের জন্য বিলাসবহুল নৈশভোজের আয়োজনও করা হচ্ছে। ২৩ মে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবে। দলীয় সূত্র বলছে, ভোটের ফলাফলের আগে শরিক দলগুলোকে উৎসাহ দিতেই এ আয়োজন। অন্য একটি অংশ মনে করছে, সমীক্ষার চিত্র যদি নাও মেলে তাহলে ম্যাজিক ফিগারের কাছাকাছি আসন পাবে বিজেপি। সেক্ষেত্রে শরিক ধরতে হবে। তাই শরিকরা যাতে অন্যত্র চলে না যায় তাই এ নৈশভোজের আয়োজন। এনডিএ জোটের শরিকদের মধ্যে অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাভিদা মুনেত্রা কাজাঘাম, শিবসেনা, জনতা দল, লোক জনশক্তি পার্টি, শিরোমনি আকালি পার্টি অন্যতম। বুথফেরত সমীক্ষার ফল অনুযায়ী বিজেপি সত্যিই কেন্দ্রে আবার ক্ষমতায় এলে আগামি ৫ বছর এনডিএর রূপরেখা কী হবে, তা নিয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন অমিত শাহ। এনডিএ জোট ফের ক্ষমতায় এলে সরকার কিভাবে চলবে, তার একটি রূপরেখা তৈরি করতে একই দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও বৈঠকে বসবে। যদিও বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমগুলোর বুথফেরত সমীক্ষাকে বেঠিক বলেই দাবি করেছে বিরোধীরা। ২৩ মে লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান মমতা ও চন্দ্রবাবু। পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং এমতাস্থায় কী করণীয়, তা ঠিক করতে কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন টিডিপি নেতা। শেষ দফা ভোটের ২ দিন আগেও মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এদিকে, বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফলে নিরাশাই জুটেছে বিরোধী শিবিরে। গত সোমবার দিল্লিতে সোনিয়া-মায়াবতীর বহুপ্রতীক্ষিত পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ভেস্তে গেছে। বসপা নেতা সতীশচন্দ্র মিশ্র জানিয়ে দিয়েছেন, দিল্লি যাচ্ছেন না পার্টি সুপ্রিমো মায়াবতী। ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার কোনো কর্মসূচিই নেই তার। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল মায়াবতীর। এ বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল উৎসাহ ছিল। শেষমেশ তা ভেস্তে যাওয়ায় মহাজোটের ভবিষ্যৎ টালমাটাল হয়ে পড়েছে বলে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিজেপিবিরোধী জোট গড়তে আঞ্চলিক দলগুলোকে একত্র করতে চালকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল চন্দ্রবাবুকে। দিল্লিতে গিয়ে রাহুল গান্ধী, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, এনসিপি নেতা শারদ পওয়ারসহ একাধিক নেতানেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। লাক্ষ্ণৌতে গিয়েও অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর সঙ্গে দেখা করেন চন্দ্রবাবু। এরপরই শোনা গিয়েছিল, মায়াবতীর সঙ্গে সোনিয়ার বৈঠক হতে পারে। সোনিয়াও ব্যক্তিগত স্তরে উদ্যোগী হয়ে ইউপিএ শরিকদের সঙ্গে কথা বলতে নির্দেশ দেন দলীয় নেতাদের। কারণ, বুথফেরত সমীক্ষায় যতই নিরাশা জুটুক না কেন, সহজে হাল ছাড়তে নারাজ ইউপিএ জোটের কা-ারিরা। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে মোদি-অমিত শাহদের হাত বাড়াতে হবে চন্দ্রশেখর রাও, জগনমোহন অথবা নবীন পট্টনায়কদের দিকে। সে প্রচেষ্টায় আগেই জল ঢেলে দিতে চায় মহাজোট। তবে মায়াবতী-সোনিয়ার বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় কার্যত তাতে ধাক্কা লেগেছে। তবে বসপা নেত্রী মায়াবতী ও সপা নেতা অখিলেশ যাদব গত সোমবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। উত্তরপ্রদেশে মোদিবিরোধী মহাজোট গড়েছিল বসপা, সপা ও আরএলডি। অখিলেশ-মায়াবতীর প্রায় ঘণ্টার বৈঠকে কি নিয়ে আলোচনা তা জানা যায়নি। এদিকে, বুথফেরত জরিপকে ভুল বলে দাবি করেছেন অখিলেশ। গত সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ফোন করে অখিলেশের দাবি, ‘বুথফেরত সমীক্ষা ভুল। উত্তরপ্রদেশে ৫০টির বেশি আসন পাবে সপা-বসপা জোট।’ বুথফেরত জরিপ বলছে, ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে মহাজোট ২০-৪০টি আসন পেতে পারে। উত্তরপ্রদেশে বুথফেরত ফলাফল বের হতেই তা-ব শুরু করেছে যোগী সরকার। বিজেপির বিরুদ্ধে সপা-বসপা মহাজোট ব্যাপক সাফল্য পাবে বলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার মন্ত্রিসভা থেকে রাজ্যের মন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান ওম প্রকাশ রাজভরকে বহিষ্কার করেছেন। গত সোমবার সকালেই রাজভরকে বহিষ্কার করে নতুন মন্ত্রী গঠনে তৎপর হয়েছে যোগী সরকার। বহিষ্কারের পরপরই এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে রাজ্যপালকে। এমনকি নতুন মন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাবও পাঠিয়ে দেন যোগী। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। বুথফেরত আগে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে সঠিক সমীক্ষা তুলে ধরতে। ২০০৪ সাল তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। সেবার বলা হয়েছিল, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে অটলবিহারি বাজপেয়ির সরকার। বাস্তবে ঘটেছিল ভিন্ন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির সরকার হেরে যাবে বলে এক্সিট পোলে বলা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, তৃণমূল ২শ’র বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছিল। ফলে ২৩ মে দিল্লির কুরসি কার দখলে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।