ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশালবহুল যাত্রীবাহী নৌযান। প্রতিবছর ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আযহার আগে এ রুটে যুক্ত হচ্ছে কোন না কোন বিলাশবহুল লঞ্চ। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পূর্বেও এ রুটে যুক্ত হয়েছে এমভি মানামী নামের সু-বিলাশ লঞ্চ। বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে সরাসরি চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা ২৪টি।
তবে বছর বছর টাইটানিক আকৃতির লঞ্চ যুক্ত হলেও বরিশাল নদী বন্দরে বাড়েনি পল্টুনের সংখ্যা। ছয়টি পল্টুনেই ভরসা খুঁজে নিতে হচ্ছে লঞ্চগুলোকে। এরমধ্যে আবার তিনটি পল্টুন অভ্যন্তরিন রুটের এক তলা লঞ্চের জন্য নির্ধারিত। ফলে ঈদ মৌসুমে তিনটি পল্টুনে জায়গা না পেয়ে অধিকাংশ লঞ্চ মাঝ নদীতে নোঙ্গর করে যাত্রী ওঠানামা করাতে হচ্ছে। এতে করে ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যাত্রীবাহি লঞ্চগুলো। তাই আসন্ন ঈদেও বরিশাল নদী বন্দরে লঞ্চে যাত্রী ওঠা-নামা করানো নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন বন্দর ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মাস্টাররা বলেন, বরিশাল নদী বন্দরে দুরপাল্লার রুটের লঞ্চের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য তিনটি পল্টুন নির্ধারন রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ হলে এক সাথে আটটি লঞ্চ নোঙ্গর করা যায়। যে কারণে স্বাভাবিক দিনে কোন ঝামেলা হয়না। কারণ ওই সময় রোটেশনের কারণে প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয়টি করে লঞ্চ চলাচল করে। তবে প্রতিবার ঈদ মৌসুমে তাদের চরম ঝামেলায় পরতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, ঈদ মৌসুমের বিশেষ সার্ভিসে ২৩টি লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীসেবা দিবে। এ ছাড়া বরিশাল ভায়া হয়ে প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য রুটের আরও আটটি যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল করবে। যে কারণে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও নৌবন্দরে লঞ্চ ঘাট দেয়া নিয়ে বিরম্বনার শিকার হতে হবে। লঞ্চের মাস্টাররা বলেন, ঈদ মৌসুমে বিশেষ ট্রিপ দেয়ার কারণে ২০ থেকে ২২টি লঞ্চ একযোগে চলাচল করে। যে লঞ্চটি আগে ঘাটে পৌঁছায় সেটির যাত্রী না নামা পর্যন্ত অপর লঞ্চটিকে মাঝ নদীতে অপেক্ষমাণ থাকতে হয়। কোন কোন সময় এক লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাতে গিয়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই বরিশাল নদী বন্দরে পল্টুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য তারা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসলেও অদ্যবর্ধি কোন সুফল মেলেনি।
বরিশাল বিআইডব্লিউটি’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোঃ কবির হোসেন বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যে লঞ্চগুলো চলাচল করছে তার প্রতিটির প্রস্থ সর্বোচ্চ ৪৪ থেকে সর্বনিন্ম ৩৮ ফুট পর্যন্ত। বন্দরে যে ছয়টি পল্টুন রয়েছে তার এক একটি ১০০ ফুট করে। সে হিসেবে ৬০০ ফুটের মধ্যে ৩০০ ফুট পল্টুন বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের লঞ্চের জন্য বরাদ্দ। ৩০০ ফুটের তিনটি পল্টুনে সর্বোচ্চ ১০টি লঞ্চ আমরা নোঙ্গর করাই। ঈদ মৌসুমে পল্টুনে জায়গা দিতে না পারায় বেশি ট্রিপের আশায় তড়িঘড়ি করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ একটি লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ থামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছেন। তাছাড়া দিবা সার্ভিসের গ্রীনলাইন ওয়াটার ওয়েজ নদী বন্দরের জেটিতে নোঙ্গর করতে পারছে না। এ দুটিকে নোঙ্গর করাতে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি’র জেটিতে।
যাত্রীবাহী নৌ-যান মালিকদের সংগঠন জাপ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি পল্টুনের সংখ্যা। আমরা লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে বহুদিন থেকে দুটি পল্টুন বৃদ্ধির জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে দাবী জানিয়ে আসছি। তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায়ও বরিশাল নদী বন্দরে দুটি পল্টুন বৃদ্ধির জন্য দাবী জানিয়েছি। ওই সভায় আসন্ন ঈদ-উল ফিতরে দুটি পল্টুন বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে এখন পর্যন্ত সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক ও বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, বরিশাল নদী বন্দরে পল্টুন সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই জানেন। এ সংকট নিরসনে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশ^ ব্যাংক একটি প্রকল্পও গ্রহন করেছে। এ প্রকল্পের অধীনে বরিশাল নদী বন্দরে নতুন দুটি পল্টুন, গ্যাংওয়ে নির্মানসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়ন করা হবে। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাংকের কনসালটেন্ট টিম নদী বন্দর পরিদর্শন করে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনও অনেক সময়ের প্রয়োজন।
কারন উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন পল্টুন স্থাপনের জন্য নদী বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এজন্য নৌ-বন্দরের পাশে থাকা ট্রলার ঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নতুন জায়গা তৈরী করতে হবে। তার আগে ট্রলার ঘাটের জন্য জায়গা নির্ধারন করতে হবে। কারণ ট্রলার ঘাট দিয়েও প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নদী পারাপার করছে। এজন্য ট্রলার ঘাট সরানোর আগে পল্টুন স্থাপন সম্ভব নয়। যদিও ট্রলার ঘাটের জন্য সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারন করে রাখা হয়েছে নৌবন্দরে ডিসি ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। তবে ঈদের আগে কিছুই সম্ভব নয়। তাই আসন্ন ঈদেও পূর্বের মতো করেই লঞ্চ নোঙ্গর ও যাত্রী ওঠা-নামা করাতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।