চাটমোহর ডিগ্রী অনার্স কলেজের (সদ্য জাতীয়করণকৃত) অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে এবং দূর্নীতির ফিরিস্তি জানাতে কলেজের শিক্ষকরা এবার রাস্তায় নেমেছেন। কলেজের অধ্যক্ষর অপসারণ দাবিতে এবং জনমত গঠণেল লক্ষ্যে কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষক গতকাল বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামেন। তারা চাটমোহর পৌর শহরের সর্বত্র অধ্যক্ষের চরম স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করেন। শিক্ষকবৃন্দ বলেন,চাটমোহরের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপিঠ এই কলেজটি এখন অধ্যক্ষের গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। তার কারণেই কলেজটি জাতীয়করণ প্রক্রিয়া ভেস্তে যেতে বসেছে। কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলেন,কলেজের অধ্যক্ষের কম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় তিনি সরকারিকরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাছাড়া অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানঅবৈধভাবে ২২ জন ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন,যাদের সরকারি করণের আওতায় আনতে পারবন না,সরকারিকরণের আওতায় না আনতে পারলে অবৈধভাবে নেওয়া লাখ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে,কলেজ সরকারিকরণ হলে কলেজ মার্কেটের জামানতের ৩৩ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে এবং অধ্যক্ষের অবৈধ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। তারা বলেন,অধ্যক্ষ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ সকলস্তরে অসহযোগিতা করছেন। তিনি হাইকোর্টে রিট করে কলেজকে আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দীর্ঘমেয়াদী অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে চাটমোহরের জনপ্রতিনিধি,শিক্ষক,সাংবাদিক,ব্যবসায়ী,সরকারি কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,‘শিক্ষকদের লিফলেট বিতরণ ষড়যন্ত্রেরই অংশবিশেষ। যারা ডিসি এবং ইউএনও’র পক্ষ নিয়েছেন,তারাই এই অপপ্রচারে নেমেছেন। তিনি বলেন,সরকারিকরণ সঠিকভাবে করতেই আমি আদালতে রিট করেছি। এতে জাতীয়করণে কোন সমস্যা হবে না।’
চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে কলেজের ১৩৮জন শিক্ষকের আত্তীকরণের ফাইল কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার নিরাপত্তা হেফাজতে চাটমোহর থানায় পাঠিয়েছেন। অপরদিকে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান গত সোমবার হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেছেন। এনিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ লাভ করেছে। কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। এনিয়ে কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কলেজের অধ্যক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছেন। কলেজের ১৩৮ জন শিক্ষকের আত্তীকরণের ফাইল গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাটমোহর থানার নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার বলেন,‘ফাইলগুলো একাধিকবার কলেজের অধ্যক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেনেনি। একপর্যায়ে ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে সেগুলো নিরাপত্তা হেফাজতে চাটমোহর থানায় পাঠানো হয়েছে।
অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,৫ই মের মধ্যে ফাইল পাঠানোর কথা। আমি ডিজিতে একাধিকবার সময় চেয়ে আবেদন করি। ইউএনও একবারও করেননি। আমি তাকে সমস্ত ফাইল দিয়েছি। তিনি কলেজে আসেননি। ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছেন। ফাইল দিয়েছি। এরমধ্যে কলেজের কতিপয় শিক্ষককে দিয়ে তিনি ডিসি সাহেবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি নাকি হয়েছে। একটি চিঠি পেয়েছি কেবল। কোন তদন্ত হয়নি।’তিনি বলেন,আমি সময় চলে যাবার পর ডিজি স্যারের সাথে কথা বলেছি। এখন বিশেষ আবেদন করতে হবে। সে কারণে আইনগতভাবে সমাধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। এখন সময় লাগবে।’এজন্য ইউএনও কোন সহযোগিতা করেননি।’
এ অবস্থায় অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান ও তাঁর অনুসারীদের কর্তৃক কলেজের শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি ও চাকুরিগত হুমকি প্রদান করার অভিযোগ এনে কলেজের ৪১ জন শিক্ষক গত ১৪ মে চাটমোহর থানায় অধ্যক্ষসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন। জিডি নং ৫১১,তাং ১৪/৫/১৯। অপরদিকে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানসহ অপর ৪১জন শিক্ষক গত ১৫ মে তার প্রতিপক্ষ ৪১জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি জিডি করেছেন। যার নং ৫৪৩,তাং ১৫/৫/১৯ ইং।