চট্টগ্রামের ২৮টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কাস্টমস কমিশনারেট। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে অন্তত একশ’ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি এবং কয়েকশ’ কোটি টাকার পণ্য অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে ২০ মে পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। বন্ড কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকৃত পণ্যের নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন না করা এবং আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য উৎপাদনের কোনো তথ্য প্রমাণ না দেয়াসহ ব্যাপক জালিয়াতির কারণে গত দেড় মাসে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, চট্টগ্রামে গত দেড়মাসে বন্ড লাইসেন্স স্থগিত হওয়া অধিকাংশই তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান। উক্ত ২৮ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে পর্যায়ক্রমে শুনানির জন্য ডাকা হবে। এতে শুনানিতে সন্তোষজনক তথ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে স্থায়ীভাবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। স্থগিত করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- শহরের দেব পাহাড় গাজী শাহ লেইনের কোহিনুর অ্যাপারেলস, সদরঘাট এলাকার সামস ডি অ্যাপারেলস, ঈদগাঁহ ডিটি রোডের কার্নিভাল ফ্যাশন, ধনিয়ালা পাড়া ডিটি রোডের ট্রেড স্ক্যান লিমিডেট, দেওয়ানহাট এলাকার বেনিলাক্স অ্যাপারেলস, কালুরঘাট শিল্প এলাকার ইমন অ্যাপারেলস, চান্দগাঁওয়ের এ এম স্যুয়েটার লিমিটেড, চান্দগাঁও টার্মিনাল কানেক্টিং রোডের সেঞ্চুরি স্যুয়েটার লিমিটেড,
সদরঘাট রোড হাজেরা কমপ্লেক্সের গ্লোবাল স্পেশালাইজড গার্মেন্টস, দক্ষিণ হালিশহর বন্দর টিলা এয়ারপোর্ট রোডের প্রাইম ফ্যাশনস, কালুরঘাট শিল্প এলাকার গ্লোবাল অ্যাপারেলস, চান্দগাঁও এলাকার সাদমান ইন্টারন্যাশনাল, কালুরঘাট এলাকার মোহাম্মদী ইন্টারন্যাশনাল, চাক্তাই রাজাখালী এলাকার শ্যারন চৌধুরী, উত্তর আগ্রাবাদ মনসুরাবাদের ডেইলিম টেক্সটাইল, চান্দগাঁও আরাকান রোডের আল্লামা ফ্যাশন, সাগরিকা শিল্প এলাকার আর এল ডেনিম, লালদীঘি পুরাতন গির্জা এলাকার মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার, চান্দগাঁও এলাকার নুপুর অ্যাপারেলস, ডবলমুরিং গোসাইলডাঙ্গা এলাকার ভেনগার্ড ফ্যাশন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের এনজা টেক্সটাইল, চাক্তাই রাজাখালীর ইউনিটি ইন্ডাস্ট্রিজ বিডি, কালুরঘাট শিল্প এলাকার ইফকো গার্মেন্টস, কালুরঘাট শিল্প এলাকার মিশন অ্যাপারেলস, এনায়েত বাজার এলাকার নীড ড্রেসেস, পটিয়া শিল্প এলাকার লিংক এক্সেসরিজ এবং মনসুরাবাদ ডিটি রোডের ডেনিম টেক্সটাইল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধায় বিনা শুল্কে পণ্য আমদানি করা হয়। আর এ সুবিধার প্রধান শর্ত হচ্ছে- আমদানিকৃত পণ্য দেশের অভ্যন্তরে সংশ্লিষ্ট কারখানায় ব্যবহার হতে হবে। আমদানিকৃত কাপড়সহ অন্যান্য কাঁচামাল দিয়ে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। অর্থাৎ বিনা শুল্কে দেশে প্রবেশ করা পণ্য আবার রফতানি হয়ে বিদেশে চলে যাবে। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পণ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য বিদেশ থেকে প্যাকেজিং সামগ্রী আসতে পারে। শুধুমাত্র ওই প্যাকেট রপ্তানির কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সরজমিনে দেখা যাচ্ছে, এসকল পণ্য চলে যাচ্ছে খোলাবাজারে। ঢাকার ইসলামপুর এবং চট্টগ্রামের টেরিবাজারের অধিকাংশ দোকান এসব অবৈধ কাপড়ে ভরপুর হয়ে গেছে। এছাড়া প্রতি বছর বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্যের নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করার বিধান রয়েছে। অথচ অনেক কারখানার মালিক তার তোয়াক্কাও করেন না। নিজেদের পছন্দমত খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করে দেন। অভিযোগ উঠেছে-অভিযুক্তরা একটি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় এসব করার কারণে প্রশাসনও আইনগত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হয়। বর্তমানে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বন্ড লাইসেন্সগুলোর সার্বিক কর্মকান্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত দেড় মাসে লাইসেন্স স্থগিত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আর বিনা শুল্কে পণ্য আমদানি করতে পারবে না। এদের কাছে পণ্য আমদানির সব তথ্য উপাত্তের হিসেব চাওয়া হবে। পণ্য উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিসহ সার্বিক বিষয়ে সঠিক হিসেব পাওয়া না গেলে লাইসেন্সগুলো বাতিল করা হবে। এ প্রসঙ্গে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বছরের অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন না করা এবং আমদানি রপ্তানি না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা এসব লাইসেন্স স্থগিত করেছি। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আমরা কঠোর অবস্থা গ্রহণ করছি। লাইসেন্স স্থগিতের এ প্রক্রিয়া আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।