খরস্রোত ধরলা নদীর কিনারে (পাড়ে) বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করে বন্যা নিয়ন্ত্রনে নির্মান করা হচ্ছে লালমনিরহাটের ধরলা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ। ফলে আসন্ন বন্যায় প্রবল নদী ভাঙ্গনের আশংকা বিরাজ করছে এলাকাবাসীর।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সুত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরের ভয়াবহ বন্যা আর নদী ভাঙ্গনের কারনে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ইটাপোতা বনগ্রামের বিস্তৃীন এলাকা ধরলার কড়াল গ্রাসে বিদ্ধস্থ হয়। ফসলহানীসহ গৃহহীন হয়ে পড়েন এ এলাকার অসংখ্য মানুষ। ধরলা নদীর কড়াল গ্রাস থেকে জনপদ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে কুড়িগ্রাম সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রন প্রকল্পের আওতায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইটাপোতা ও বনগ্রাম এলাকায় ধরলার ডান তীরে এক হাজার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ নির্মানে প্রকল্পিত ব্যায় ধরা হয় প্রায় ৩৮.৭৪ লাখ টাকা। এ বাঁধের কিছু অংশ মাটির কাজ হলেও বাকীটুকু অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধটি নির্মানের লক্ষে কাজ নেন বেলাল কনস্ট্রাশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
গত ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারী মাসে কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন অজুহাতে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩১ তারিখে শেষ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কাজ মাত্র ৭০ শতাংশ শেষ করতে পেরেছেন ঠিকাদার। এরই মধ্যে নদীর পাড় খুড়ে বালু তুলে ২৫ হাজার দুইশত জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকী রয়েছে জিও ব্যাগ বসানোর কাজ। বর্ষা আসার আগে জিও ব্যাগ বসানো না হলে পুরো বাঁধ নদীর ¯্রােতে ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ দিকে ওই প্রকল্পের আওতায় ওই বাঁধ থেকে ওয়াব্দা বাজার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধটি প্রসস্থ করনে মাটি ভরাটের কাজ দেয়া হয়। সেখানে বাঁধটি প্রস্থ্যে ৪.৩ মিটার দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা করা হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ ক্ষেত্রের পুর্বের বাঁধটির উপর কিছু বালু ফেলে দায়সারা গোছের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এ জন্য নদীর কিনারেই বসানো হয়েছে দুইটি বোমা মেশিন। ফলে বর্ষা শুরু হলেই আবারো ভয়াবহ ভাঙ্গনের আতংকে রয়েছেন নদীর তীরবর্তি হাজার হাজার মানুষ। আর এভাবে বালু দিয়ে তৈরী করা বাঁধ সামান্য পানিতেই আবারো নদীতে গড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন সরকারী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার এটা একটা কৌশল মাত্র।
ধরলা পাড়ের বাসিন্দরা জানান, গত বছরে নদীর ভাঙ্গনে চোখের সামনে অনেকের বাড়ি ঘরসহ ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। নদীর কিনারে বোমা মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় আবারো ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে পড়ার শ্বঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যা না আসতেই নদীর পাড় ভাঙ্গতে শুরু করেছে। এই মুহুর্তে বোমা মেশিন পাড় থেকে না সড়ালে এ বাঁধ দিয়ে কোন উপকারে আসবে না বলেও দাবি করেন তারা।
ধরলা পাড়ের এখাধিকবার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি নাজিম উদ্দিন বলেন, এই ধরলা নদী এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাকার খনি। কাজের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মাঝ খানে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা। বার বার বাড়ি ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, আবার পানি সরে গেলে ফিরে আসছি। ধরলা পাড়ের বাঁধ নির্মানের নামে এই কাজকে তিনি শুভঙ্করের ফাকি বলেও দাবী করেন। তিনি এরকম অস্থায়ী কাজ চান না। নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারের নিকট স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানেরও দাবী জানান তিনি এবং চরাঞ্চলবাসী।
এ কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পাউবো'র উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম জানান, নদীর কিনার থেকে বোমা মেশিন সড়িয়ে নদীর মধ্যবর্তি এলাকায় বসাতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। তাকে নিষেধ করার পরও ঠিকাদার এমনটি করেছে। এর পরেও তিনি মেশিন না সড়ালে কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে ঠিকাদার আগামী দিনে মেশিন দুরবর্তি স্থানে নিতে সম্মতি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে রহমান জানান, মাটি না পাওয়ার কারনে পুরাতন বাঁধটির মাঝের অংশ কেটে নিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে এবং কেটে নেয়া মাটি পরবর্তিতে বাঁধের উপরে দেয়া হবে। নদীর কিনারে বোমা মেশিন বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তার জানা নেই বলে জানান। নদীর কিনারে বোমা মেশিন বসানোর সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।