কিশোরগঞ্জে শোক শ্রদ্ধায় সমাহিত হলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী এম এ কাইয়ুম। শুক্রবার বাদ জুম্মা ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদ চত্বরে তাঁর জানাজার নামাজ শেষে বাগে জান্নাত গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজার নামাজে জেলা রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজনসহ সহ¯্রাধিক মুসুল্লী উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শিল্পাঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। রাজধানীর ধানম-ি এলাকার মেয়ের বাসায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকালে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুকে কফ থেকে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। চিত্রশিল্পী এম এ কাইয়ুম চার মেয়ে, এক ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট রোড এলাকার বাসায় মরদেহ নিয়ে আসার পর রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজন দেখতে আসেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এমএ কাইয়ুম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। শিক্ষা শেষে তদানিন্তন পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে সিনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৬৪ সালে করাচিতে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁকে পেশোয়ার সেন্ট্রাল জেলে বন্দী করা হয়। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়ে নানা বাধা অতিক্রম করে আফগানিস্তান হয়ে ভারতীয় হাই কমিশনের সহায়তায় দেশে পালিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে যোগদান করেন। পরে তাঁকে সোনারগাঁও জাদুঘরে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আর্টিস্ট কাম ডিসপ্লে অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি ১৯৯০ থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের শিল্প উপদেষ্টা ও পরে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সিনিয়র ডিসপ্লে অফিসার হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি একজন গুণী শিল্পী ছিলেন। তাঁর চিত্রকর্ম বাস্তবধর্মী ও জীবনধর্মী এবং কিছুটা লোকজ শিল্পের দ্বারা প্রবাহিত ছিল। তিনি জলরঙ ও তেলরঙ উভয় মাধ্যমেই পারদর্শী ছিলেন। শিল্পকর্ম ছাড়াও তিনি গবেষণাধর্মী প্রাবন্ধিক লেখক ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত 'আদি শিল্প চিরন্তন সংস্কৃতি, 'লোকচিত্রের রূপবৈচিত্র, কিশারগঞ্জের লোকজ ঐতিহ্য ওচারুকলা এবং সর্বশেষ গ্রন্থ ' রেখাচিত্রে বাঙালী মনীষা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে।
তিনি একজন প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। একজন বড়মাপের শিল্পী হলেও তিনি ছিলেন একেবারেই প্রচার বিমুখ ও সুন্দর মনের মানুষ।