রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাঁটা রোগীকে এন্টিভেনম ব্যবহার করে (সাপে কাঁটা রোগীর বিশেষ ভ্যাকসিন) সফল হয়েছেন কর্তব্যরত মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. অচিন্ত কুমার দাস ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. বিদ্যুৎ কুমার কুন্ডু।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রোগীর পরিবার সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের নতুনচর গ্রামের আঃ আলীমের ছেলে আবদুল আউয়াল (২৭) কে গত ২২ মে সন্ধ্যায় বাড়ী থেকে বিষধর সাপে ছোবল দেয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার চিকিৎসা শেষে শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র প্রদান করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি যখন সিঁড়ি থেকে নামতে যাই তখন আমাকে বিষধর সাপে ছোবল দেয়। শুনেছি সাপে কাটলে মানুষ বাঁচে না তাই তখনই আমি ভেবেছিলাম আমি মনে হয় বাঁচব না। আল্লাহ আমার হায়াত কেটে নিয়েছেন।’
আওয়াল বলেন, ’সাপটি ছিল গুক্কু সাপ তাই আমি বাড়ীর লোকদের বললাম আমাকে দ্রুত বালিয়াকান্দি হাসপাতালে নিয়ে চল। আমি ডাক্তারদের এসে বললাম আমাকে গুক্কু সাপ কামড় দিয়েছে আপনারা আমাকে ইনজেকশন দেন আমি বাঁচলে বাঁচবো আয়ু না থাকলে মরে যাব। শরীরটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আসছিল। ডাক্তাররা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন তারা আমাকে আশ্বস্ত করেন আপনি বেঁচে থাকবেন আপনি নির্ভয়ে থাকুন। সত্যিই আমি বেঁচে ফিরবো ভাবতে পারিনি আমি ডাক্তারদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
হাসপাতালে আসার পথে আমি আমার ৪ বছরের শিশুটির কথা ভাবছিলাম, আমার পরিবারের কথা ভাবছিলাম। সৃষ্টিকর্তা অনেক দয়ালু তাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সাপে কাটলে মানুষ বেঁচে ফেরে এমনটি খুব কমই শোনা যায়। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সবাই অনেক আপন ভেবে আমাকে সুচিকিৎসা দিয়েছেন। আমি এখন সুস্থ হয়ে বাড়ীতে আছি। ২৪ ঘন্টার চিকিৎসা গ্রহণ করার পর আজই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছি।’
সাপে কাঁটা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. অচিন্ত কুমার দাস বলেন, মুডোফোনের মাধ্যমে জানতে পারি একজন সাপে কাঁটা রোগী আমাদের হাসপাতালে আসছেন। বিষয়টি জানতে পেরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. বিদ্যুৎ কুমার কুন্ডু সাপে কাঁটা রোগীর চিকিৎসার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু প্রস্তুত রাখে। রোগী হাসপাতালে আসার পর তার স্বজনরা আমাদেরকে নিশ্চিত করেন বিষধর সাপ তাকে ছোবল দিয়েছে। নিয়মানুযায়ী রোগীর স্বজনদের সম্মতি সাপেক্ষে চিকিৎসা শুরু করি। এই রোগীকে সুস্থ্য করার ক্ষেত্রে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের কাছে, কারণ চিকিৎসা পরবর্তী আইসিইউ ব্যবস্থা, এনেসথেসিয়া ডাক্তারসহ যে ধরনের সাপোর্ট প্রয়োজন হয় সেটি আমাদের কাছে ছিল না। তাৎক্ষনিক ভাবে আমরা যদি তাকে উপর্যুক্ত চিকিৎসা না দেই তাহলে তার জীবনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। ফলে ওই সময় তাকে আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার জানামতে বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাঁটা রোগীকে ¯েœক এন্টিভেনম ব্যবহার এবং তার সুস্থ্য হওয়ার মত এই প্রথম কোন ঘটনা এটি।
তবে রোগীর স্বজনদের আন্তরিকতার কারণে একরকম ঝুকি নিতে পেরেছি। তাদের সাহস ও উৎসাহ আমাদের চ্যালেঞ্জ নিতে বাধ্য করেছে। সৃষ্টিকর্তা সহায় আবদুল আউয়াল সুস্থ্য হয়ে শুক্রবার সকালে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ী চলে গেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে বালিয়াকান্দি হাসপাতালে এন্টিভেনম ইনজেকশন পাঠানো হয়। এরপর সাপে কাঁটা ৩-৪ জন রোগী হাসপাতালে আসলেও তারা সঠিক তথ্য ও রোগীকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে না পারায় এন্টিভেনম ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ১জন বেঁচে ফিরেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি।
তাছাড়া রোগীর স্বজনদের অসচেতনতা, অসহযোগিতা, বিধিমোতাবেক বন্ডে স্বাক্ষর না করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমাদের চেষ্টা ও ইচ্ছে থাকার পরও রোগীদেরকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হই। এখনো আমাদের অনেক সচেতনতার অভাব রয়েছে। সাপে কাটলে আগে ঝাড়ফুঁক করে স্থানীয় ওঝাদের কাছে সময় নষ্ট করে তারপর হাসপাতালে আনা হয়।
এই প্রথম একজন সাপে কাঁটা রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পেরেছেন। আসলে তার স্বজনদের আন্তরিকতা ও অনুমতি পেয়েই তাৎক্ষনিক ভাবে চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ পেয়েছি আমরা।
ডা. ফারুক হোসেনের মতে একজন সাপে কাঁটা রোগী যদি নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে তাহলে তাকে বাঁচানো সম্ভব।