দারিদ্রতা তাকে দমাতে পারেনি। শত প্রতিকুলতা কে পিছনে ফেলে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের বিনাই গ্রামের অদম্য মেধাবী পিতৃহীন আফরিন তমা। কিন্তু বর্তমান অর্থাভাবে তার কলেজে ভর্তির সংশয় দেখা দিয়েছে। আফরিন তমা ভবিষ্যতে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চাইলেও তার সে স্বপ্ন বাস্তব রুপ পাবে কি ?
১০ বছর আগে পিতা আনিছুর রহমান আনু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এতিম দুই কন্যাসন্তান রেখে মৃত্যু বরণ করেন। অসহায় বিধবা মা আক্তার বানু অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে দুই সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করেন এবং দু’ মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালান। কখনো কখনো আফরিন তমা মায়ের সাথে অন্যের বাড়ীতে কাজে সহয়োগিতা করেছে। তারপরও থেমে যায়নি তার লেখাপড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছা। মা ও দুই বোন অর্ধাহারে অনাহারে থেকেও আফরিন তমা পড়ালেখা চালিয়ে যায়। পড়ালেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছে শক্তি থাকলে দারিদ্রতা কোন বাঁধা নয় আফরিন তমা সেটায় প্রমান করেছে। সে এ বছর বিনাই জসিমউদ্দিন মেমোরিয়াল বিদ্যানিকেতন থেকে এসএসসি পরিক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। তার এ সাফল্যে এলাকাবাসী, স্কুলের শিক্ষক সহ সবাই খুশি। কিন্তু অর্থাভাবে আফরিন তমা কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ে আছে তার অসহায় পরিবার।
আফরিন তমার মা বিধবা আকতার বানু বলেন, আমি অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। ছোট মেয়ে একই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। এখন বড় মেয়ের কলেজে পড়ালেখার খরচ জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে কারণে আমার মেয়ের কলেজে ভর্তি করানো নিয়ে চিন্তায় আছি।
মেধাবী ছাত্রী আফরিন তমা বলেন, অভাবের সংসারে অনেক দুঃখ কষ্টে লেখাপড়া করেছি। আমার মাও অনেক কষ্ট করেছে। বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। কলেজে ভর্তি হতে পারবো কি না জানি না তবে আমি সবার নিকট দোয়া চাই।
ওই গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আফরিন তমার মধ্যে পড়ালেখার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ দেখেছি। আর্থিকভাবে যদি তাকে সহযোগিতা করা যায় সে ভবিষ্যতে ভাল ফলাফল অর্জন করবে।
তার স্কুলের শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও আফরিন তমা পড়াশুনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী তার এভাল ফলাফলে আমরা শিক্ষকরা খুশি। তিনি সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহবান জানান উচ্চ শিক্ষা অর্জনে অসহায় পিতৃহীন ছাত্রীটির পাশে এগিয়ে আসার জন্য।