বরগুনার জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতি ১৬০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০ থেকে ৬০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা। এ ছাড়া চাল বিতরণে অনিয়ম ও চাল চুরির প্রতিবাদ করায় তিন জেলেকে মারধরের অভিযোগ করেছেন জেলেরা। মারধরে আহতরা হলেন আ. মান্নান মুসুল্লী (৪৫) দেলোয়ার হোসেন সিকদার (৫০) জহিরুল মুসুল্লী (৩০ ) এর মধ্যে গুরুত্বর আহত দেলোয়ার হোসেন সিকদারকে শুক্রবার রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির।
জানা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে আট মাসের জন্য ছোট (সাড়ে ৪ সেন্টিমিটার)ফাঁসজাল দিয়ে উপকূলের নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন সরকার। নিষেধাজ্ঞা কালীন সময় এসব জেলেকে জনপ্রতি প্রতি মাসে(জাটকা নিধন সময়)৪০কেজি চাল দেওয়া হয়। বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নং নলটোনা ইউনিয়নের ৩০ থেকে ৬০ কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে।নিয়ম অনুসারে চাল কম দেয়ার প্রতিবাদ করা ও চাল চুরির প্রতিবাদ করায় তিন জেলেকে ইউপি ভবনের একটি কক্ষে আটকিয়ে মারধর করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের নির্যাতনের শিকার জেলেরা অভিযোগ করেন চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই খলিলুর রহমান জেলেদের চাল বিতরন কালে দুই বস্তা চাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় এবং জেলেদের নামে বরাদ্ধ চাল সঠিক ভাবে না দেয়ায় জানতে চাওয়ায় চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন।এবং দেলোয়ার হোসেন সিকদারকে ভবনের মেঝেতে ফেলে লাথি ঘুষি দিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়। এতে দেলোয়ারে পুরুষাঙ্গে গুরুত্বর আঘাত প্রাপ্ত হয়।
আজগরকাঠী গ্রমের জেলে কবির মৃধা, ফারুক খান, রিপন, আলম খান,, নলটোনা গ্রামের নাসির খন্দকার, দেলোয়ার খন্দকার, নিশানবাড়ীয়া গ্রমের নাসির শিকদার, আলী হোসেন, শহীদ খান সহ ২০ জন জেলে জানান তারা প্রত্যকে ৩০ থেকে ৬০ কেজি সহায়তার চাল পেয়েছেন।
সহায়তার চাল পেয়েছেন এমন একজন আজগরকাঠি গ্রামের জেলে মাহবুব খান বলেন আমাকে দুই বস্তা (৬০ কেজি ) চাল দেয়া হয়েছে। বাড়ি নিয়ে চাল মাপ দিলে ৪৪ কেজি চাল হয়েছে দুই বস্তায়। চাল কম দেয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় চেয়ারম্যান তিন জেলেক পিটিয়ে আহত করেন।
মারধরের শিকার জেলে দেলোয়ার হোসেন সিকদার বলেন জেরেদের চাল কম দেয়ার বিষয় প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ইউপি ভবণের একটি রুমে আটকিয়ে আমাকে মেঝেতে ফেলে লাথি মারতে থাকে।
সাবেক ইউপি সদস্য সুলতান আহম্মদ সানু বলেন, চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই খলিলুর রহমান ভাড়ায় মটরসাইকেল চালালেও জেলে তালিকায় তার নাম আছে। এ ছাড়া জেলেদের সহায়তার বিতরণ চাল চুরি করার প্রতিবাদ করে উপস্থিত কয়েকজন জেলে, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান তাদের মারধর করে আহত করেন।
ইউপি সচিব সামসুল হক বলেন, চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই দুই বস্তা চাল চুরি করে। পরে জেলেরা এই বিষয়টি আমাকে জানালে খলিল জেলেদের উপর ক্ষিপ্ত হয়, এ সময় জেলেদের সঙ্গে খলিলের মধ্যে হট্রগোল বাধে, পরে চেয়ারম্যান জেলেদেরকে রুমে নিয়ে লাঠি দিয়ে পেটায়। আমি রাতে একজনকে ভর্তি করি। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, বলেন মারধরে জেলে দেলোয়ারের পুরুষাঙ্গ ফুলে গেছে, এতে তার প্রসাবে জ¦ালা পোড়া হচ্ছে, আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার পর জানান যাবে তার কিডনিতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন আমি কোনো জেলেকে মারধর করিনি, উপস্থিত জেলেদের মধ্যে মারামারি হয়েছে, পরে আমি তাদের মিলিয়ে দিয়েছি। প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, চাল বিতরনে অনিয়ম ও জেলেদেরর মারধরের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।