চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে মনোয়ারা বেগম (৯৭) ও তার মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শাহ মেহেরুন নেসা বেগমকে (৬৮) খুনের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। মুলত: সম্পত্তি দখল করতে আমেরিকা থেকে এসে মা ও তার বড় বোনকে খুনে অংশ নিয়েছেন স্বয়ং ছেলেই। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া অন্যান্যের কোরআন ছুঁয়ে শপথও করানো হয়। ভয় দেখানো হয় যাতে এ ঘটনা কেউ বাইরে প্রকাশ না করেন। শহরের খুলশী থানার আমবাগান ফ্লোরাপাস রোডের নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুইজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমন চমকানো তথ্য।
গত ২৫ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে গ্রেফতারকৃত হারুন অর রশিদ মুন্না ও গাড়িচালক মো. মাহফুজ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াছ খানও। এরআগে ২৪ মে রাতে তাদের এ দুজনকে টাইগারপাস এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, গত বছরের ১৫ জুলাই খুলশীর আমবাগান এলাকায় নির্মমভাবে খুন হন মনোয়ারা বেগম ও তার মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকতা শাহ মেহেরুন নেসা বেগম। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত মেহেরুন নেসা রুপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসরে যান। ঘটনার পর মনোয়ারা বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদি হয়ে অজ্ঞাত লোকজনকে আসামি করে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ ডাবল মার্ডারের এতোদিন কূল-কিনারা করতে পারেননি।
এ মামলার তদন্তকর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ খান সাংবাদিকদের বলেন, ওই দুইজনকে গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া হয় স্বীকারোক্তি। সেই স্বীকারোক্তিমতে- মা-মেয়ে হত্যাকান্ডের সঙ্গে মাসুদুর রহমান জড়িত ছিলেন। তিনি আমেরিকা থেকে দেশে এসে মা ও বোনকে খুন করেন। কেউ যাতে সন্দেহ না করতে পারেন; এজন্য পরদিন তিনি পুনরায় চলে গেছেন আমেরিকা। হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া অন্যান্যের কোরআন ছুঁয়ে শপথও করান মাসুদুর। যাতে এ ঘটনা কেউ প্রকাশ না করেন। বর্তমানে স্বীকারোক্তির এসব তথ্য যাচাই চলছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হারুন অর রশিদ মুন্না ও মাহফুজ জানিয়েছেন-শাহাবউদ্দিন সাবুর বাসায় বসেই মাসুদুর ও মুশফিকসহ ৬জন দুর্বৃত্ত মিলে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এরপর মাসুদুরের পরিকল্পনা ছিল-মায়ের কাছ থেকে খুলশীর ওই বাড়ির দানপত্র আদায় করা। পরে এসব সম্পত্তি শাহাবউদ্দিন সাবুর মাধ্যমে তিন কোটি টাকায় বিক্রি করার কথাও ছিল।
ঘটনার সময় রাত সাড়ে ১২টায় মাসুদুর নিজেই বাসার দরজায় টোকা দিলে মেহেরুন্নেসা দরজা খুলে দেন। এ সময় মেহেরুন নেসা বলেন, ‘তুই বিদেশ থেকে হঠাৎ দেশে কেন এলি?’ পরে বাসার ভেতরে মাসুদুর মেহেরুন নেসার কাছ থেকে সম্পত্তির দুটি দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে মেহেরুন নেসা অসম্মতি জানালে তাকে গলাটিপে ধরে হত্যার পর লাশ ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার একপর্যায়ে মেহেরুন নেসার মা প্রথম হত্যার স্বাক্ষী মনোয়ারাকেও গলাটিপে হত্যা করা হয়। পরে লাশ পানির রিজার্ভ ট্যাংকিতে ফেলে দেওয়া হয়। উপর্যুক্ত ঘটনায় মেহেরুন নেসার ভাইয়ের ছেলে মুশফিকুর রহিম ব্যাপ্তীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে এ খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. মাসুদ রানা ও মো. শাহাবউদ্দিন ওরফে সাবু ওরফে মুছা নামে আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে-এমন ধরণের হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে একটি মহল প্রশাসনের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।