গাইবান্ধার ফায়ার স্টেশন গুলোতে কোন ডুবুরি না থাকায় গত ৬ বছরে জেলার নদ-নদীর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। নৌ-পথে দুর্ঘটনায় ও খাল-বিল, পুকুর-দিঘীসহ জলাশয়ের পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য গাইবান্ধার পাঁচটি ফায়ার স্টেশনের একটিতেও নেই কোন ডুবুরি। গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোসহ পানিতে ডুবে কেউ নিখোঁজের ঘটনা ঘটলে অপেক্ষা করতে হয় রংপুর থেকে আসা ডুবুরি দলের জন্য। এতে করে বিপাকে পড়তে হয় স্বজনহারা পরিবারগুলোকে। শুধু তাই নয়, ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীবিধৌত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার দেড়’শরও বেশি চরাঞ্চলগুলোতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে নিজস্ব স্পিডবোট না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যায়না আগুন নেভাতে। আর এ কারণে চরাঞ্চলে অগ্নিকা-ের ঘটনায় কেউ কখনও জানায়ও না তাদেরকে। এজন্য ফুলছড়ির বালাসীঘাটে নদী ফায়ার স্টেশনের দাবি করেছেন এ জেলার মানুষ।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ জেলায় নদ-নদী ও পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে মানুষ নিখোঁজ হলে গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ি ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি চেয়ে কল আসে ২২ টি। এসব ঘটনায় ২০১৩ সালে মারা যায় দুইজন, ২০১৪ সালে চারজন, ২০১৫ সালে তিনজন, ২০১৬ সালে একজন, ২০১৭ সালে আটজন, ২০১৮ সালে দুইজন এবং চলতি বছরে মারা গেছে ছয়জন। নদীতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছে দুইজন ও এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এ জেলায় ডুবুরি পদ সৃজনের জন্য তথ্য চেয়ে নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত আর কোন অগ্রগতি নেই ডুবুরি পদ সৃজনের। গাইবান্ধায় কোন ডুবুরি নেই। গাইবান্ধাসহ রংপুর বিভাগের আট জেলার জন্য রংপুর ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি রয়েছে মাত্র দুইজন। এই দুইজন ডুবুরি চষে বেড়ান আট জেলা। এর বাহিরেও নদ-নদীসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ও নিখোঁজের ঘটনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৬ মে ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের হরিচন্ডির চরে অগ্নিকা-ে কাজলী বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুটি ঘর ও ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায় ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে একটি গাভীও মারা যায়। ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরে গণ উন্নয়ন একাডেমিতে অগ্নিকা-ে আসবাবপত্র, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও বইসহ বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ দুটি ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চরাঞ্চলগুলোতে অনেকবার অগ্নিকা-ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণে চেষ্টা করেছেন স্থানীয়রাই। কেননা ফায়ার সার্ভিসকে ডাকা হলে তাদেরকে নৌকা ভাড়া করে দিতে হবে। আর নৌকায় করে যেতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তাই ফায়ার সার্ভিসকে কখনো ডাকা হয়না চরাঞ্চলের অগ্নিনির্বাপণের জন্য।
সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের ধুতিচোরা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত ৭ মে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবে আমার ভাগ্নি ও এক প্রতিবেশি নিখোঁজ হলে রংপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের আসতে সময় বেশি লাগায় তাদেরকে আর পাওয়া যায়নি। নিজেরা নৌকা নিয়ে নদীতে খুঁজেও তাদের সন্ধান পাইনি। অথচ গাইবান্ধায় যদি ডুবুরি থাকতো তাহলে তাড়াতাড়ি উদ্ধার অভিযান শুরু করলে দুজনকেই পাওয়া যেত। ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, এ জেলায় রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনার মতো খর¯্রােতা বড়-বড় নদ-নদী। অথচ নদীতে কেউ ডুবে গেলে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করতে এ জেলায় কোন ডুবুরি নেই। অনেক সময় নদীতে ডুবে কেউ নিখোঁজ হলে পরদিন মরদেহটি ভেসে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে হয়। এটা স্বজন হারানো পরিবারের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। তাই নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার এবং চরাঞ্চলে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের জন্য এ জেলায় একটি নদী ফায়ার স্টেশন চালু করা প্রয়োজন।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম সরকার বলেন, ফুলছড়ির বালাসীঘাটে একটা নদী ফায়ার স্টেশন চালু করলে সেখানকার ডুবুরি যেমন নদ-নদীগুলোতেও উদ্ধার অভিযান চালাতে পারবে, তেমনি পুকুরসহ মেইনল্যান্ডের অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকেও দ্রুত উদ্ধার করতে পারবে। এ ছাড়া চরাঞ্চলে লাগা আগুন নেভাতে যেতে পারবে নদী ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা।