লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় নামুড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের রাস্তা দখল করে চলছে হাটবাজার। এতে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে, পড়া লেখায় ঘটছে বিঘœ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও প্রতিকার পায়নি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৭ মে) বেলা ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠ ও রাস্তা দখল করে কাঁচা তরিতরকারির পাইকারী হাট বসিয়ে দেদারছে কেনা বেচা চলছে। গরুর মলমূত্রের ও তামাকের দুর্গন্ধে শ্রেণিকক্ষে বসে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। দূর দুরান্ত থেকে আগত পাইকারেরা বড় বড় ট্রাক ও ভটভটি এনে স্কুল মাঠ দখল করে রেখে কাঁচামাল লোড-আনলোড করছে। সেই সাথে উপজেলার কৃষকেরা ট্রাক, ভটভটি দিয়ে গরু, বাঁশ ও ভ্যান যোগে কাঁচা তরিতরকারি ও বিভিন্ন মালামাল এনে ওই বাজারে বিক্রি করছে।
সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার দুই দিন হাট-বাজার বসে। এই দুই দিন স্কুলের প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ভ্যান গাড়ি, ভটভটি, সাইকেল ও ট্রাক সহ লোকজনের ভিড়ের মধ্য দিয়ে এপাশ ওপাশ কাটিয়ে কোন রকমে স্কুলে যাতায়াত করেন। গরুর হাট বসায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাঠ হিসেবে কোনো কাজে আসছে না। নিয়মিত তাদের শারীরিক কসরত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গরু-ছাগলের পয়োনিষ্কাশনের কারণে বিদ্যালয় মাঠের আশ-পাশের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা ওই হাট-বাজারের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ঠেলা ঠেলি করে স্কুলে যাতায়াত করে। কিন্তু চরম বিপাকে পড়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। যে কারণে অনেক অভিভাবকেরা হাট-বাজারের দিন তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে চায় না। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এ বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে হাট-বাজার চললেও পুলিশ প্রশাসনেরও কোন মাথা ব্যথা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামানের কাছে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলেও এর কোন প্রতিকার হয়নি। আগামীতেও হবে কি না স্কুল কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকগণ জানেন না। কেননা এখানে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোক হাট বসানোর কারণে লাভবান হচ্ছে বলেই তারা এখান থেকে হাট সরানোর বিষয়ে কেউ বাধা দিলেই তার উপর নেতে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
এ বিষয়ে নামুড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম জানান, ইতি পুর্বে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিষয়টি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ কয়েক বার স্কুল মাঠ থেকে হাট-বাজার উচ্ছেদের জন্য লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগ প্রদান করেও কোন ফল হয়নি। তিনি আরো জানান, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাট-বাজারের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। হাঁস-মুরগীর হাট বসায় বাচ্চাদেরকে নিয়ে দুর্গন্ধের মধ্যেই ক্লাস চালিয়ে যেতে হয়।
এ বিষয়ে হাটের ইজারাদার ইজারাদার সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ে মাঠে হাট থাকবে কিনা সমাজকল্যান মন্ত্রী’র সাথে কথা বলে ঠিক করা হবে। এখানে হাট আছে এবং থাকবে। কেউ কিছু বলতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র সাথে কথা বলবেন। তিনিই ব্যবস্থা নেবেন এখানে হাট-বাজার থাকবে কি না।
বির্দালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া জামান বলেন, যেদিন আমাদের স্কুলে হাট বসে সেদিন আমি স্কুলে যাই না। কারণ অনেক লোকের ভির, রাস্তায় বড় বড় ট্রাক আর আমাদের স্কুলের গোটা মাঠে তরিতরকারী দিয়ে ভুর্তি করে রাখে। তাছাড়া গরুর মল মুত্রের দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই সে ওই দিন স্কুলে যায় না। যতি কোনদিন হাট বাজার বন্ধ হয় তাহলে সেদিন থেকে সে স্কুলে যাবে। এজন্য সাদিয়া জামান প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্কুল মাঠে হাট-বাজার বসায় শিক্ষার্থীদের চলাচলের যে সমস্যা সৃষ্টি হয় বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। হাট ইজারাদার সাইফুলের সাথে অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।