রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী নির্মুলচরে অবস্থিত বনের গাছের ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া মরা ডাল পালার টেন্ডার দেয়া হলেও গাছ কেটে নিয়েছে ঠিকাদার। অভিযোগে ঠিকাদারের প্রতিনিধি জাকির (৪৮) গ্রেপ্তার হলেও মুচলেকা দিয়ে ছাড় পান।
প্রেমতলী নির্মুলচরে অবস্থিত বনের ঝড়ে পড়ে যাওয়া নম্বরকৃত গাছ ও ডাল ২০১৬-১৭ অর্থ বছর ১০৬ নং গ্রুপে টেন্ডার দেওয়া হয়। ওই টেন্ডারের ভিত্তিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ২০ মে/১৯ ইং তারিখ যাহার স্বরক নং ২২.০১.৮১০০.২৪৫.১৭.০০৯.১৯/ ১৪৬৩ মোতাবেক ২ হাজার ৯৩৩.৪০ ঘনফুট কাঠ (জ¦ালানি) অপসারনের জন্য নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের মেসার্স নাজিম স-মিল মালিক নাজিমুদ্দিনকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী ও সুবিধা ভোগিদের অভিযোগ ২০ মে/১৯ ইং তারিখে আগে থেকেই ঠিকাদারের লোকজন উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম উপস্থিতিতে বনের সর্বচ্চো তাজা ও মোটা গাছ গুলি কাটতে শুরু করে। শুক্রবার পর্যন্ত ৩০থেকে ৪০ ট্রাক্টর বনের গাছ কেটে নিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী ও সুবিধা ভোগিরা বুঝতে পারে যে, টেন্ডারের নামে ঠিকাদার, উপজেলা বন কর্মকর্তা, পাহারাদারসহ স্থানীয় কয়েক জন যোগ সাজস করে টেন্ডারের কৌশলে বনের তাজা গাছ কেটে উধাও করে দিচ্ছে।
তখন তারা বাধা প্রদান করে। বিষয়টি ব্যাপক জানাজানি হলে, শনিবার নওগাঁ জেলার সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদী জামান, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল আকতার ও বন বিভাগের জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ঘটনা স্থল পরিদর্শনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনা স্থল থেকে ঠিকাদারের প্রতিনিধি জাকিরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত জাকির পরির্দশন কর্মকর্তাদের সামনে স্বীকারোক্তি দেন যে টেন্ডারের বাইরে যে গাছ কাঁটা হয়েছে।
ফরাদপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম ও পাহাদাররা দাঁড়িয়ে থেকে গাছ কাটিয়েছে। ফরাদপুর গ্রামের আসির উদ্দিন বলেন, বনকর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম দাঁড়িয়ে থেকে ঠিকাদারের লোক দিয়ে গাছ কাটানো হয়েছে। ফরাদপুর গ্রামের সুবিধা ভোগি আবদুল ওহাব (৫৬)সহ কয়েক জন সুবিধা ভোগি অভিযোগ পাহারাদার জিল্লুর রহমান, আশরাফ, শরিফুল ও উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন যোগসাজশ করে টেন্ডার কৌশলে বনের গাছ কেটেছে। শুধু তাই নয় এরা বনের মাটিতে লাগানো ফসল, খড়, গাছের ডালকে বাইওে বিক্রি করে দেয় প্রতি বছর।
শনিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৬ ইং সালে টেন্ডার দেওয়ার সময় নম্বরকৃত কোন গাছ দেখা যায়নি। ওয়ার্ক অর্ডারের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে, গাছ কেটেছে তা একটাও নম্বরকৃত গাছ না। এ ছাড়াও বনের মধ্যের গাছ কেটে ট্রাক বা ট্রাক্টর যাওয়ার রাস্তা করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এত বনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন,টেন্ডারের বাইরেও গাছ ও বনের গাছ কেটে রাস্তা করার কথা স্বীকার করেন। জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জাকির স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত গাছ কাটর প্রমান মিলেছে ও কোন গাছের নম্বর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনা স্থল পরিদর্শনে আসা নওগাঁ সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদী জামান বলেন, ঘটনা স্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রোববার নির্মলচরের বন পরিদর্শন করে এসেছি আর ডাল পালার বদলে গাছ কাটার তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ পেলে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।