রহিমা বেগমের মাত্র ১৮ কাঠা জমি। এই জমি থেকে চলতি মৌসুমে ১৮ মন ধান পেয়েছেন রহিমা। এই ধান আর মানুষের কাছে হাত পেতে কোনোমতে সংসার চলে তার।
৪৮ বছর আগে রহিমার স্বামী নুর মোহাম্মদ মারা গেছেন। তাদের ৫টি কন্যা রয়েছে। এ জমির ওপর নির্ভর করে অনেক কষ্টে তাদের বিয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধা রহিমার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের বেলগাছি গ্রামে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের খাল কেড়ে নিয়েছে তার সর্বস্ব। মাত্র ২ শতাংশ জমির ওপর একটি টিনের ছাপরা ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই রহিমা বেগমের। খাল খনন শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
এ জমির ধার দিয়ে ৬টি মেহগনি গাছ ছিল, সেগুলো খাল খননকারীরা কেটে ফেলেছে। বর্তমানে রহিমা বেগমের শেষ সম্বলটুকু খালে নিয়ে যাচ্ছে। এমন চিন্তায় এখন তিনি নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।
একমাত্র সম্বল টিনের ছাপরা ঘরের বারান্দায় বসে কান্না ছাড়া আর কিছুই করার নেই বৃদ্ধা রহিমার। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, এখন কি করে চলবো। সারা বছরের খাবার এ জমি থেকে আসত। এখন তাও তো শেষ হয়ে গেল। কি করে চলবো। এ দুনিয়াতে আমার কেউ নেই। কার কাছে যাব, কার কাছে খাব?
রাজশাহীর বাঘায় ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই খাল খননের বিষয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমির মালিকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে যান।
এ সময় জমির মালিকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারার কারণে উপজেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা।
জানা গেছে, মোশিদপুর থেকে নওটিকা আরিফপুর পর্যন্ত ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন হয়। এ খাল খনন করা হচ্ছে সম্পূর্ণ ধানী জমির ওপর দিয়ে। জমির মালিকদের কিছু না জানিয়ে এবং ভূমি অধিগ্রহণ না করে শুধু প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে খাল খনন কাজ শুরু করে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে পেরে রাজশাহীর আদালতে পৃথকভাবে ৪টি মামলা দায়ের করেন মালিক তমেজ উদ্দিন, মোজাহার হোসেন, আবুল কাশেম ও রবিউল। মামলার পর আদালত ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করেন। তারপরও খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
মামলার বাদী তমেজ উদ্দিন, মোজাহার হোসেন, আবুল কাশেম ও রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের রের্কডকৃত ভোগ দখলীয় জমি রক্ষা করতে আমরা প্রায় ৩০ জন জমির মালিক ৭০ বিঘা জমি বাঁচাতে পৃথকভাবে আদালতে ৪টি মামলা করেছি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, খাল খননের বিষয়ে জমির দাবিদাররা আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আপাতত খাল খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।
রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল হক বলেন, বাঘার মানুষের উন্নয়নের জন্য মন্ত্রীর সুপারিশে প্রকল্প অনুমোদন হয়। সেই মোতাবেক কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে জমির মালিকানার উপর দিয়ে প্রকল্প যদি হয়ে থাকে ব্যবস্থা নিব।
তবে এখন পর্যন্ত মামলার কারণ দর্শানোর বিষয়ে কোনো নোটিশ পাননি বলে তিনি জানান।
এদিকে পূণ: খাল খনন করার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয়রা উপজেলার ঢাকাচন্দ্রগাথী গ্রামের একটি মানববন্ধন করেন। আয়োজিত মানববন্ধনের বক্তব্য রাখেন স্থানীয় মহিউল হাসান টিনি, হাবিবুর রহমান হাবি, বজলুর রহমান বজু প্রমুখ।