রাজবাড়ী বাগমারা-জৌকুরা সড়ক দিয়ে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগের কারণ হবে কচ্ছো গতিতে চলা সড়কের উন্নয়ন।
সড়কের কাজ শুরু করার ১৫ মাসের মধ্যে ৩১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিলো। রাজবাড়ীর সাথে পাবনার নৌপথে যোগাযোগের মাধ্যম এই সড়কে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আসছে ঈদেও দুর্ভোগে পড়তে হবে যাতায়াতকারীদের। সম্প্রতি দূষনমুক্ত সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা বাসিন্দারা।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাগমারা-জৌকুরা ফেরীঘাট সড়কটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার। সড়কটি রাজবাড়ী-কুস্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বাগমারা চৌরাস্তা মোড় থেকে শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুরায়। সড়কটি প্রশ্বস্তকরণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। স্পেকটা ইনঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও মেসার্স ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায়। কাজের চুক্তি মূল্য ধরা হয় ২৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ২৮ জুলাই রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কটির নির্মাণ কাজের শুরুতে মাটি খননের পর প্রথমে ১৪ ইঞ্চি বালু দিতে হবে। এরপর বালু ও খোয়ার মিশ্রণ দিয়ে ১৬ ইঞ্চি ভরাট করার পর পাথর ও বালুর মিশ্রণ দিতে হবে আরো আট ইঞ্চি। সবচেয়ে প্রায় ৫ ইঞ্চি (১২০ মিলিমিটার) কার্পেটিং করতে হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগমারা থেকে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বাগমারা মোড়ের পাশেই রাস্তার শুরুতে রাস্তার পাশে কিছু মাটি স্তুপ করে রাখা। বালুবাহী ভারী ট্রাক চলাচল করায় রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বাগমারা চেয়ারম্যান বাড়ির এলাকায় সেতুর উত্তরপাশে রাস্তায় দুটি খননযন্ত্র রাখা। কয়েকজন শ্রমিক সেতুতে কাজ করছে। তবে বাগমারা থেকে সূর্যনগর রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় কোনো শ্রমিক কাজ করছে না। প্রায় ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সাথে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের জন্য জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ একটি সহজ মাধ্যম। এই নৌপথ ব্যবহার করে রাজবাড়ীসহ ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালঘঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলার সাথে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নাটোর প্রভৃতি জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অন্যথায় কুষ্টিয়া হয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দ্বিগুণ পথ অতিরিক্ত ঘুরতে হয়।
রাজবাড়ী বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুরা ফেরিঘাট এলাকা থেকে বাস ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতো। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বাস চলাচল শুরু হতো। এই পথে ৩০ টি বাস যাতায়াত করতো। ঢাকার যাত্রীদের সুবিধে হতো। রাস্তায় বেহাল অবস্থার কারণে অন্তত দেড় বছর ধরে লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন শুধুমাত্র ওই পথে দুরপাল্লার বাস যাতায়াত করে।
বাগমারা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান পরিবর্তন ডট কম কে বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত বেহাল অবস্থায় ছিলো। সড়কটিতে বিভিন্ন খানাখন্দ ছিলো। ধূলায় চলাফেরা করা অসম্ভব হয়ে যেতো। এই রাস্তার টেন্ডার হওয়ার কথা শুনে সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ধূলো বালিতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। পানি দেওয়ার কথা থাকলে তেমন পানিটানি দিতে দেখা যায় না।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইড ইনঞ্জিনিয়ার সাগর হোসাইন পরিবর্তন ডট কম কে বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাঝে মধ্যে পানি দেওয়া হয় না। এতে করে রাস্তায় ধূলাবালি বেড়ে যায়। রাস্তার কাজ ৩১ শতাংশের চেয়ে আরো একটি বেশি হওয়ার কথা। আমি মাস খানেক ধরে এই প্রকল্পে যোগদান করেছি। ঈদে জনদুর্ভোগ লাঘব করার জন্য আমাদের একটি টিম থাকবে। ওই সময় কোনো গাড়ির সমস্যা হলে তা সমাধানে কাজ করা হবে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাসার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একই সঙ্গে দুটি কাজ চলছে। এতে করে ওই কাজটি খুব জোরে সোরে চলতে পারে নাই। আমরা তাদের বারবার তাগিদ দিচ্ছি। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে এক সপ্তাহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও জনপথের বিশেষ টিম রাস্তায় থেকে সমস্যার সমাধানে কাজ করবে।