লালমনিরহাট সদরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের স্টোর থেকে ৩২ লাখ টাকার ওষুধ চুরির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। স্পেশাল সার্ভে কমিটির তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও সার্ভে কমিটির প্রধান ডাঃ মো. আবদুল বাসেদ বলেন, “সার্ভে কালে স্টক ও সরবরাহ পর্যালোচনায় ৩৪ প্রকারের ওষুধের গড়মিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেমি ফ্লোক্সাসিন, সেফুরাক্সিম ও মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটসহ ৩৪ পদের ওষুধের স্টক এবং সরবরাহের তালিকার মধ্যে কোন মিল নেই। টাকার অংকে প্রায় ৩০-৩২ টাকার ওষুধ নেই। অধিকতর তদন্তে এই টাকা বা ওষুধের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ও সার্ভে কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, কিছু ওষুধ রেজিষ্টারের পাতায় উল্লেখ থাকলেও গোডাউনে এর সিকি পরিমান নেই। কিছু ওষুধ সরবরাহ দেখানো হয়েছে, কিন্তু সরবরাহ করা হয়নি। রেজিস্টারে ঘষামাজা ও ওভার রাইটিং করা হয়েছে। এসব বিষয় অধিকতর তদন্ত করে দেখার জন্য রংপুর থেকে একটি তদন্ত টিম আসার কথা রয়েছে। তাদের তদন্তে আরো বিস্তারিত কিছু জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ঢাকার ২১২ মিডফোর্ড রোডের মেসার্স বনানী মেডিকেল স্টোর, একই শহরের টিকাটুলির মেসার্স আলেয়া করপোরেশন ও ৬০/এ ডিস্টিলারি রোডের গেন্ডারিয়া এলাকার মেসার্স জাওয়াদ ড্রাগ হাউস নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরেএই হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার হিসাবে কার্যাদেশ পায় এবং ওষুধ সরবরাহ করে।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ের দরপত্র ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বদলিজনিত কারণে সেই সময়ে দরপত্র করা হয়নি।
তিনি ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর তত্বাবধায়ক পদে যোগদানের পর দরপত্র পক্রিয়ার কাজে হাত দেন। এ সময় সদর হাসপাতালের ওষুধের স্টক রেজিস্টার ও সরবরাহ রেজিস্টারের মধ্যে অসঙ্গতি দেখতে পান। প্রকৃত ঘটনা কি সেটা জানতে তিনি ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল স্টোর সার্ভে করার জন্য এই হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ মো. আবদুল বাসেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটি গত ২২ মে তার হাতে ওষুধ স্টকের গড়মিল সংক্রান্ত একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন। তিনি বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ অমুল্য চন্দ্র সাহাকে অবহিত করেন।
গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার স্টোর কিপার মো. সাহেদুল হক ছোটনকে প্রশাসনিক কারণে নীলফামারী জেলার ডিমলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একই পদে স্টান্ড রিলিজ (বদলি) করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে ওষুধ চুরির সাথে তার কোন সম্পর্ক আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।
এ ব্যাপারে স্টোর কিপার মো. সাহেদুল হক ছোটন ওষুধ সরবরাহের রেজিস্টার ও স্টক রেজিস্টারের তথ্য গড়মিলের বিষয়ে স্বীকার করে বলেন, তিনি ফার্মাসিস্টকে সঠিকভাবে ওষুধ সরবরাহ করেছেন। কিন্তু রেজিস্টারে তার হাতের লেখা এবং ঘষামাজা কেন এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।