চট্টগ্রামের চাক্তাই খালের ৪৮ দখলদার বেপরোয়া। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেও এদের উচ্ছেদ করা হয়নি। বরং এ সকল দখলবাজদের দাপটে আশপাশের লোকজনও উদ্বিগ্ন। ওদিকে সেখানে এরইমধ্যে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছে। দখলদাররা স্থাপনা গড়ে তুলছে। আর ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে কোটি কোটি আয় করছে। এতে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে এ খালটি। শহরের সিংহভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় এ চাক্তাই খাল দিয়ে। ফলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় খালটি পরিষ্কার করা। কিন্তু দখলে খাল সরু হয়ে গেছে। এজন্য আগামি বর্ষায়ও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
একাধিক সূত্র জানায়, বিগত ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ওই অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা করে চাক্তাই খাল সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি। ১৫ সদস্যের ওই কমিটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিকট প্রতিবেদনটি জমাও দিয়েছিল। এতে জেলা প্রশাসকও ঘোষণা দিয়েছিলেন অবৈধ দখলদারদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এছাড়াও ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নৌ মন্ত্রণালয়ের নদী সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ২৬তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল চাক্তাই খালকে দখলমুক্ত করার। এরপরেও খালটি দখলমুক্ত না হওয়ায় হতাশা দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- খাল দখল করে ১৯টি দোকান, ৩টি সেমিপাকা ঘর, ২টি একতলা ও ১টি চারতলা ভবন, ৭টি টিনশেড ঘর, ৪টি বেড়ার ঘর, ১টি সীমানা প্রাচীর, ২টি দেয়াল, ৭টি টিন ও কাঠের বেড়া, ১টি গার্ডওয়াল, ১টি লোহার ফ্রেমের ওপর টিনের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। এতে চাক্তাই খালের বাম তীরের পাড়ে শুলকবহর মৌজায় বহাদ্দারহাটে ৭শ’৯৩ বর্গফুট দখল করে চারতলা ভবন নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশনও। ভবনটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব সার্কেল-২ এর অফিস হিসাবে কার্যক্রম চলছে।
এ প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, খালপাড়ে যেসব বাড়ি ও দোকানপাট রয়েছে তারা বিভিন্ন বর্জ্য খালে ফেলছে। এতে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দখলদার উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা উচিত। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, অবৈধ দখলদাররা যত শক্তিশালীই হোক, সরকারের চেয়ে বড় নয়। জনগণের সম্পত্তি এভাবে দখল করে রাখাটা দুঃখজনক। দ্রুত অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে চাক্তাই খালকে উদ্ধার করার জন্য প্রশাসনের ওপরের মহলের হস্তক্ষেপ চাই। স্থানীয় গৃহিনী আকলিমা আক্তার বলেন, দখলদাররা সরকার দলীয় কিছু নেতার ছত্রছায়ায় এসব করে যাচ্ছে। স্থাপনা গড়ে তুলছে। আর ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে কোটি কোটি আয়ও করছে। এজন্য প্রশাসনও তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারছেনা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন এফএনএসকে বলেন, সিডিএ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবে। এটা তাদের দায়িত্ব। আমরা কর্ণফুলীকেই গুরুত্ব দিচ্ছি সবচেয়ে বেশি। এদিকে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল নাসির উদ্দিন বলেন, ড্রেনের ডিজাইন অনুযায়ী যেখানে যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে আমরা অবশ্যই উচ্ছেদ করব। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও সিডিএরও সহযোগিতা নেওয়া হতে পারে।